দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

গোসলের মাস'আলা

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এর প্রত্যেকটি কার্যাবলীই নিয়ম ভিত্তিক এবং তা সম্পাদন করার তরীকা বা পদ্ধতিও সন্নিবেশিত। অতএব, যে কোন কাজ প্রদত্ত নিয়মানুযায়ী করা না হলে, তা যথাযথ আদায় হবেনা এবং তার পূণ্যও অর্জিত হবেনা। যেমন- গোসলের ক্ষেত্রে বর্ণিত নিয়ম-পদ্ধতিগুলো, যথা- ফরজ, সুন্নাত ও মুস্তাহাবসমূহ জানা এবং সে অনুযায়ী গোসল করা অপরিহার্য। অন্যথায় জানাবাতজনিত (নাপাক) কারণে গোসল করা হলে পবিত্রতা হাসিল হবেনা এবং ইবাদত-বন্দেগী করা হলে, তাও শুদ্ধ হবেনা। নিচে গোসলের ফরজ, সুন্নাত এবং মুস্তাহাবগুলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো-


যে সব কারণে গোসল ফরজ হয়ঃ

১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
২. সহবাসে (সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক)।
৩. মেয়েদের হায়েয-নিফাস শেষ হলে।
৪. ইসলাম গ্রহন করলে (নব-মুসলিম হলে)।
.
গোসলের ফরয তিনটি-

১। কুল্লি করা।
২। নাকে পানি দেয়া এবং
৩। সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো।
জ্ঞাতব্য বিষয় : গড়গড়ার সাথে কুল্লি করা আবশ্যক, তবে রোজাদার ব্যক্তিদের জন্য গড়গড়া করতে হবেনা। নাকের ভিতরের উপরিস্থ শক্ত হাড্ডি পর্যন্ত পানি প্রবেশ করিয়ে এমনভাবে ঝেড়ে ফেলতে হবে, যেন কোন প্রকার শুষ্ক ময়লা না থাকে। রোজাদার হলে, অঙ্গুলি দ্বারা নাকের ছিদ্র ভিজায়ে নিবে।
.
ফরয গোসলে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনভাবে ধৌত করতে হবে, যেন চুল পরিমাণ স্থান ও শুষ্ক না থাকে। অন্যথায় শরীর পাক হবেনা। অতএব উক্ত গোসলে নিম্নলিখিত অঙ্গসমূহের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।

(১) নাভী ও কানের পেঁচের স্থান।
(২) হাত, কান, নাক এবং গলায় অলংকার পরিহিত স্থান।
(৩) মাথার চুল এবং দাড়ি, ভুরু, মোচ যদি এমন ঘণ হয় যে, সহজে পানি প্রবেশ করেনা, তাহলে সে সমস্ত স্থানের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন একটি চুলের গোড়াও শুষ্ক না থাকে। যদি স্ত্রী লোকের কেশ (মাথার চুল) খোলা থাকে, তবে সমস্ত কেশ ধৌত করা ফরজ। আর যদি খোপা কিংবা বেণী বাঁধা থাকে, তাহলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছালেই যথেষ্ঠ হবে। খোপা বা বেণীর কারণে যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব না হয়, তবে তা খুলে ধৌত করা অপরিহার্য।
(৪) পায়ের বা শরীরের ফাটা স্থানে মলমজাতীয় ওষুধ লাগানো থাকলে অথবা শরীরের কোন স্থানে মাছের আঁশ, আঠা লেগে থাকে তবে তা উঠায়ে ফেলতে হবে।
(৫) যাদের অঙ্গুলি এরূপ জমাট যে, সহজে পানি প্রবেশ করেনা, তার প্রতি দৃষ্টি রেখে পানি পৌঁছাতে হবে।
(৬) যাদের খত্না হয়নি, বিনা কষ্টে লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া উল্টানো সম্ভব হলে, তা খুলে ধৌত করতে হবে।
(৭) হায়েজ, নেফাছ কিম্বা নাপাকীর গোসলে স্ত্রী লোকের বাহ্যদ্বার, যোনীদ্বার ধৌত করা ফরজ।
.
.
গোসলের সুন্নত :

(১) ওযূর ন্যায় বিস্মিল্লাহ্ বলা।
(২) নিয়ত করা। নিয়্যত এই-
ﺖﻳﻮﻧ ﻞﺴﻔﻟﺍ ﺔﺑﺎﻨﺠﻟﺍ ﻎﻓﺮﻟ
উচ্চারণঃ- নাওয়াইতুল গোসলা লি রাফ্য়ীল জানাবাতি।
অর্থঃ- আমি নাপাকী দূর করার জন্য গোসল করছি।
(৩) দু’হাতের গিরা (কব্জি) পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
(৪) লিঙ্গ (যোনীদ্বার) ও গুহ্যদ্বারে কোন প্রকার নাপাকী থাকুক আর নাই থাকুক, উক্ত স্থানদ্বয় ধৌত করা।
(৫) শরীরের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকলে, তা ধৌত করা।
(৬) নামাযের ওযূর ন্যায় ওযূ করা এবং মেসওয়াক করা। কেউ যদি পুকুরে অথবা কোন জলাশয়ে নেমে গোসল করে, তবে সেখান থেকে উপরে উঠে পা ধৌত করবে।
(৭) সমস্ত শরীর তিনবার ধৌত করা সুন্নাত।
(৮) প্রথমে মাথায়, অতঃপর ডান স্কন্ধে, অতঃপর বাম স্কন্ধে তিনবার করে এমনভাবে পানি ঢালা, যেন সমস্ত শরীরে পানি বইয়ে যায়।
(৯) প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা কালে প্রথমবার মর্দন করা।
(১০) পর্দা করে গোসল করা।
.
.
গোসলের মুস্তাহাব:

(১) গোসল করা অবস্থায় কোন প্রকার কথা না বলা বা কোন প্রকার দোয়া পাঠ না করা, তবে একান্ত জরুরত হলে বলতে পারে।
(২) কাপড় পরিধান করার পর দু’পা ধৌত করা।
(৩) কর্ণদ্বয়ে পানি পৌঁছানোর পরে কর্ণকুহরে কনিষ্ঠ অঙ্গলি প্রবেশ করানো।
(৪) গোসলের শেষে রুমাল, গামছা দ্বারা শরীর মুছে ফেলা।
(৫) কারো সাহায্য না নেয়া।
(৬) উঁচু স্থানে বসে গোসল করা।
(৭) মৌখিক নিয়ত করা।
(৮) নাপাকীর গোসল তাড়াতাড়ি করা।
(৯) গোসলের পর দু’রাকায়াত নফল নামায পড়া।
.
.
গোসলের তরতীব :

প্রথমে পেশাব-পায়খানার আবশ্যক হলে, তা সেরে নেয়া। অতঃপর উত্তর কিংবা দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসে বিসমিল্লাহ এবং মনে মনে গোসলের নিয়ত বলা। অতঃপর পানির পাত্রে হাত ডুবানোর পূর্বে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা। অতঃপর বাম হাত দিয়ে লিঙ্গ (যোনীদ্বার) এবং মলদ্বার ধৌত করা, সেই সাথে শরীরের অন্যস্থানে নাপাকী লেগে থাকলে, তা ধুয়ে নিয়ে উক্ত হাত (মাটিতে মর্দ্দন করে) ধৌত করা। অতঃপর নামাযের ন্যায় ওযু করা এবং প্রথমে মাথায়, পরে ডান কাঁধে, পরে বাম কাঁধে, পরে অবশিষ্ট শরীরে পানি ঢালা। এভাবে পর্যায়ক্রমে তিনবার পানি ঢালা এবং প্রথমবার পানি ঢেলে সমস্ত শরীর মর্দ্দন করা। গোসল শেষে রুমাল বা তোয়ালে দ্বারা শরীর মুছে কাপড় পরিধান করা। পদদ্বয় না ধুয়ে থাকলে, ধুয়ে নেয়া। অতঃপর দু’রাকায়াত নফল নামায পড়া।

No comments

Powered by Blogger.