দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক সুস্থতা বড় হাতিয়ার


আত্মহত্যা প্রতিরোধে মানসিক সুস্থতা বড় হাতিয়ার

১০ ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০১৯, এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ Working together to prevent suicide অর্থাৎ সবাই মিলে কাজের মাধ্যমে একএিত হয়ে আত্মাহত্যার প্রবনতা রোধ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্ব আরোপ করা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরত্বপূর্ণ ।কেননা,বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এবং ভয়াবহ নেতিবাচক বিষয় আত্মোহত্যা।আত্নহত্যা বা আত্মহনন যাকে ইংরেজিতে আমরা suicide হিসেবেই বেশি চিনি। suicide হচ্ছে কোন ব্যাক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বির্সজন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়া বিশেষ অর্থাৎ নিজেকে হত্যা করা, একে committing suicide or successful suicide ও বলা হয়ে থাকে।যেমনঃ গলায় দড়ি, বিষপান,কীটনাশক, ছুরিকাঘাত, ছাদ থেকে লাফ দেওয়া ইত্যাদি। আবার, অনেকে নিজেকে অনবরত আঘাত করে এবং নিজেকে শেষ করে দিতে চায় কিন্তু সে মরে না বা জীবিত থাকে সেই সকল কর্মকান্ডকে বলা হয় সুইসাইডাল এটেম্ট (suicidal attempt) যেমনঃ হাতকাটা,জিনিস পএ ভাঙা,না খেয়ে থাকা,চিল্লাপাল্লা করা,নিজেকে আঘাত করা ইত্যাদি আত্নহত্যার দুটি প্রক্রিয়াই ভীষণ ক্ষতিকর।আত্মহত্যা পরিকল্পিত অথবা আবেগ তাড়িত বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। মনোচিকিৎসকগণ আত্নহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদ জনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। মানসিক অসুস্থতা ব্যক্তি( হতাশা, উদ্ভিগ্ন, হীনমন্যতা,নিজেকে ব্যর্থ ভাবা) ইত্যাদি যখন চরমভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তখনই ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করে।আত্নহত্যার মতো পথ বেছে নেয়।সে ভাবে একমাএ মৃত্যুই পারে সকল সমস্যার সমাধান দিতে।মানসিক সুস্থতা বা সুঅবস্থা মানসিক অসুস্থতার ঠিক বিপরীত। মানসিক সুস্থতা বলতে WHO র মতে, শারীরিক, মানসিক,সামাজিক ও আত্নিকভাবে সুঅবস্থা শুধুমাএ রোগ বা বৈকল্য থাকাই নয়।আরও সহজভাবে মানসিক সুস্থতা হচ্ছে ব্যক্তির এমন একটি অবস্থা যখন একজন মানুষ তার নিজের ক্ষমতা বুঝতে পারে,জীবনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সাথে মানিয়ে নিতে পারে,উৎপাদনশীলতার সাথে কাজ করতে পারে এবং তার সম্প্রদায়ে অবদান রাখতে পারে।এইরকম ইতিবাচক ধারনায় মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাক্তিগত সুস্থতা আসে। মানসিক সুস্থতা সম্পন্ন ব্যক্তি কখনও আত্নহত্যা করতে চায় না।কারন তিনি নিজেকে ভালোবাসে, নিজেকে উৎপাদনশীল করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।অনেক দেশেই আত্নোহত্যাকে অপরাধ রূপে ঘোষণা করেছেন।অনেক ধর্মে আত্মহত্যাকে চরম পাপ বলে মনে করা হয়।যিনি নিজের জীবন নিজে বিনাশ করে তাকে আত্নোঘাতক বা আত্নোঘাতিনী রূপে সমাজে পরিচিত হন।এমনকি এটাকে সবাই নেতিবাচক ভাবে দেখেন।বর্তমানএমনকি আত্নহত্যাকারী ব্যক্তি কারো আত্নীয় হলে পরিচয় দিতে বা লোকমুখে জনসম্মুখে এই বিষয়ে কথা বলতে চায় না।সামাজিক ও ধর্মীয় চাপে আত্নহত্যা কারী ব্যক্তির কর্মকান্ড আড়াল করে রাখা হয়।বেশীরভাগ মানুষের আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা বা কোন জ্ঞান নাই বললেই চলে।বিশ্ব জুরেই আত্মাহত্যা একটি বড় সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক রির্পোট বলছে,প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বে একজন করে আত্মাহত্যা করেন। বিশ্বে যে যে কারণে মানুষের মৃত্যু হয়, তার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আত্মাহত্যা।১৫-১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মাহত্যা প্রবনতার হার সবচেয়ে বেশি। নারীদের তুলনায় পুরুষদের আত্মাহত্যার হার তিন থেকে চার গুন বেশী।প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আত্মা হত্যা করে মারা যাচ্ছে। খবরের কাগজে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই আত্নোহত্যার খবর চোখে পড়ে। নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পিছনে অনেক সময়ই থাকে অতি তুচ্ছ কারণ।কখনও শুধু মা বাবার বকুনি খেয়ে,শিক্ষকের বকুনি,স্কুলের ফলাফল অসন্তুষ্ট হয়ে,কোনো পছন্দের মানুষকে না পেলে,পছন্দের পোশাক,খাবার না পেলে, প্রেমে ব্যর্থ হলে,মোবাইল বা কোনো ডিভাইস না পাওয়ার অভিমানে হারিয়ে যায় সব রকমের ভালোবাসার বন্ধন থেকে।নিজের আবেগের উপর নিয়ন্ত্রন না থাকার বেশীর ভাগ কারনেই আত্মহত্যা সংঘটিত হয়।নিজের কষ্ট যন্ত্রণা দীর্ঘদিন চেপে রাখা অথবা প্রকাশ না করার কারনেও ব্যাক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও মনোবিজ্ঞানী গণ গবেষনায় আত্নোহত্যার পেছনে কোন না কোন মানসিক অসুস্থতাকে দায়ী করেন। মানসিক ভাবে অসুস্থত ব্যাক্তিরাই আত্মাহত্যা করার পথ বেছে নেয় এবং সবার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে চায়।আত্মহত্যা শুধুমাত্র একজনের প্রানহানিই নয়।তা পরিবারের সদস্যদের পক্ষে বিশাল মানসিক আঘাত ও বটে।সেই সাথে বন্ধু,আত্মাীয়স্বজন, সহকর্মীদেরও দীর্ঘ সময় মানসিক আঘাত সহ্য করতে হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আত্মাহত্যা প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন রূপরেখা তৈরি করে দিয়েছে।আরও বলা হয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করা হোক।সেই সঙ্গে শিক্ষা কর্মসূচিতেও সচেতনতা মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।
গবেষনায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনে ১ জন মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় ভোগেন।এখন আসা যাক মানসিক সমস্যা বলতে কি বোঝায় যা অনেকেই জানে না।জানলেও তা প্রকাশ করেন না।যদি কারো চিন্তার পরিবর্তন,আবেগের পরিবতর্ন,স্মৃতিশক্তি­র পরিবতর্ন,বিচার বিবেচনা পরিবতর্ন,যা ব্যাক্তির নিজের এবং অন্য মানুষের ক্ষতির কারণ। যদি লক্ষনগুলো টানা কয়েক সপ্তাহ বা মাস থাকে তবেই বুঝতে হবে তার কোন না কোন মানসিক সমস্যা আছে। দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।যারা নিরলস ভাবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।গবেষনায় আরো বলা আছে,প্রায় ১৮.৫ শতাংশ শিশু এবং ১৬.৪ বয়স্ক লোক মানসিকভাবে অসুস্থ থাকেন। গবেষনায় আরও দেখা গেছে,৭০ শতাংশ তরুন কোন না কোন মানসিক সমস্যায় ভোগে। মানসিক সমস্যাটা একদিনে তৈরী হয় না। ছোটবেলা থেকেই স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্­যালয় কিংবা চাকুরী জীবনের কোন না সময়ে ঘটে থাকে।সঠিক সময়ে যদি মানসিক চিকিৎসা করা না হয় তবে তা মারাত্মক ক্ষতির কারন হতে পারে।আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ।আজকের শিশুই কখনও তরুন, কখনও যুবক, কখনও বয়োজৈষ্ঠ্য ভূমিকা পালন করে।জীবনের সকল সময় একরকম নাও যেতে পারে।জীবনের কোন না কোনো পর্যায়ে বিপর্যয় আসতেই পারে।তাই বলে আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে না।তাই আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের বিকাশের পাশাপাশি সুস্থ,সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থতা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। সুস্থ মানসিক বিকাশের অভাবে মানুষ অনবরত ধ্ধংসের দিকে নিজেদের ধাবিত করছে।বিভিন্ন অপরাধ থেকে শুরু করে, মাদক সেবন,ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষন,গুম,আত্মহত্যার­ মতো কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে।এই অবস্থা চলতে দেয়া যাবে না।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে আত্নহত্যা প্রতিরোধ করার প্রধান বাধা হলো সামাজিক সচেতনতার অভাব ও আত্মহত্যার সচেতনতার উন্মুক্ত আলোচনার অভাব,আত্মহত্যার সংবেদনশীলতা এবং কিছু দেশে আত্মঘাতী আচরণের অবৈধতার জন্য অনেক সময় আত্মহত্যার বিষয়টি সাধারণ মৃত্যু হিসেবেও বিষয়শ্রেণী ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সাধারণ ভাবে যতগুলো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যকই লিপিবদ্ধ করা হয়।সেটা অনেক সময় বিভিন্ন দেশের সামাজিক, ধর্মীয়,রীতিনীতি, আইনকানুনের উপর নির্ভর করে।উদাহরণস্বরূপ,নেপ­ালে আইনগতভাবে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। তাই কেউ আত্মহত্যার চেষ্ঠা করলে তাকে কারাভোগ করতে হয় অথবা অর্থদন্ড দিতে হয় এবং ক্ষেএবিশেষে উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে হয়।তাই স্বাভাবিক ভাবেই নেপালে আত্মহত্যার ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয় না।আত্মহত্যায় অনেক গুলো আন্তঃসম্পকির্এবং অন্তনির্হিত বিষয় কাজ করে যা আত্মহত্যা প্রবনতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্পষ্ট জানিয়েছে, আত্মাহত্যা প্রতিরোধ করা যায়।এর জন্য ব্যাক্তিগত স্তর থেকে শুরু করে জাতীয় স্তর পর্যন্ত উদ্যোগী হতে হবে।পাশে দাড়াতে হবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মানুষগুলোর। হঠাৎ কোনও বিপযর্য়ে আঘাত পাওয়া মানুষ গুলোকে জোগাতে হবে মানসিক শক্তি। তাই আমাদের সকলকে আত্মাহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি মানসিক ভাবে নিজে এবং অন্যকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

সোনিয়া আক্তার পুষ্প
মনোবিজ্ঞান বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

1 comment:

  1. সারা গায়ে চুলকানি নির্দিষ্ট একটি ঔষধের নাম নেই। চুলকানির জন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যেমন এন্টিহিস্টামিন, কাফ সাপ্রেসর, নাসাল স্প্রে, ব্রোঙ্কোডাইলেটর ইত্যাদি। কিছু অধিক সারাগায়ে বা সারাতোর নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে এবং সেই জন্য নির্দিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ উচিত। চুলকানি

    ReplyDelete

Powered by Blogger.