অনলাইন ক্লাস নিয়ে আরো ভাবতে হবে
অনলাইন ক্লাস নিয়ে আরো ভাবতে হবে: অনলাইন ক্লাস প্রসঙ্গে
প্রানঘাতী করোনা ভাইরাসের দাপটে থমকে গেছে বিশ্ব। তৈরি হয়েছে বিবিধ সমস্যা, দেখা দিয়েছে নানান সংকট। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা, খাতা মূল্যায়ন ও ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। নি:সন্দেহে এটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বের অনেক কিছুই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থায় অনলাইন কার্যক্রম শুরু হলে একাডেমিক কার্যক্রম ভেঙে পড়বে না, শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়বে না। যদিও এখনই উপযুক্ত সময় অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করার। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা পূর্বক কতটুকু যৌক্তিক হবে এই সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশে অনলাইন শিক্ষা-কার্যক্রমে সুবিধার চাইতে সমস্যা বেশি। আর্থিক সমস্যা, নেটওয়ার্ক সমস্যা সবচাইতে বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে থাকাটা তাদের জন্য প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে । সেখানে পরীক্ষার ফি, সেমিস্টার ফি, ব্যয়বহুল ইন্টারনেট খরচ চালানো তাদের জন্য বিলাসিতা বলেই ধরা যায়। আবার অনেকেরই উপযুক্ত ডিভাইস নেই যা দিয়ে অনলাইন ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে৷ তাদের অধিকাংশই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা। করোনা সংক্রমণের ছুটির প্রথম দিকেই তারা মেস কিংবা হল ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছে।
গ্রামের দুর্বল নেটওয়ার্ক আরো এক বিশাল সমস্যা। সামান্য বৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াটা খুবই সাধারন বিষয়। শুধু যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে তা না। শহরে লকডাউনের কারনে অনেকেই বাসা থেকে বের হতে পারছে না। দোকানপাট সব বন্ধ থাকার কারনে ফোনে ইন্টারনেটের জন্য রিচার্জ, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের বিল পরিশোধ করতে পারছে না। যা শিক্ষার্থীদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়াবে৷ শুধু যে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে তা না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পাঠদানে পারদর্শী নয়। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ, পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। ইত্যাদি বিষয় বিপাকে ফেলবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের৷ তাই অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করার আগে বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইউজিসিকে। অন্যথায় হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
লেখক-
সাইদুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী, এআইএস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments