দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

কৃষ্ণকুমারী নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ | কাহিনী সংক্ষেপটি লিখেছেন মো. এনামুল হাসান কাওছার

কৃষ্ণকুমারী নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ | কাহিনী সংক্ষেপটি লিখেছেন মো. এনামুল হাসান কাওছার

কৃষ্ণকুমারী নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ  কাহিনী সংক্ষেপটি লিখেছেন মো. এনামুল হাসান কাওছার, শিক্ষার্থী- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

একনজরে মাইকেল মধুসূদন (১৮২৪-১৮৭৩) রচিত কৃষ্ণকুমারী নাটকের পরিচয়


qরচনাকাল—  সেপ্টেম্বর, ১৮৬০ খ্রিঃ
qপ্রকাশ-কাল-  ১ম সংস্করণ—১২৬৮ সাল (১৮৬১ খ্রিঃ)।
  ৩য় সংস্করণ—১৮৬৯ খ্রিঃ, আগস্ট
  মুদ্রণ-ব্যয়মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর
qঅভিনয়
১। শোভাবাজার নাট্যশালা—৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৭ খ্রিঃ
২। জোড়াসাঁকো নাট্যশালা
৩। ন্যাশনাল থিয়েটার—২২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৭৩ খ্রিঃ
৪। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার ২৪ জানুয়ারি, ১৮৭৪ খ্রিঃ

Øপ্রেরণা-
বেলগাছিয়া নাট্যশালার প্রধান অভিনেতা কেশবচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয়নৈপুণ্যনাটকীয় দোষ-গুণ-বিচার-শক্তিতে মধুসূদন মুগ্ধ ছিলেন
কেশববাবু মধুসূদনকে লিখেছিলেন
রাজপুত জাতির ইতিহাস এরূপ বিস্তৃতবৈচিত্র্যপূর্ণ যে, মধুসূদনের ন্যায় প্রতিভাবান পুরুষ তাহা হইতে অনায়াসেই গ্রন্থ রচনার উপযোগী উপাদান সংগ্রহ করিতে পারেন।”
এই পত্রের মাধ্যমে মধুসূদন 'কৃষ্ণকুমারী' রচনার জন্য প্রণোদিত হয়েছিলেন

মধুসূদনের কৃষ্ণকুমারী নাটকের চরিত্রাবলি-


§ভীমসিংহ-  উদয়পুরের রাজা
§বলেন্দ্ৰসিংহ-    রাজভ্রাতা
§সত্যদাস-   রাজমন্ত্রী
§জগৎসিংহ-  জয়পুরের রাজা
§নারায়ণ মিশ্র-    রাজমন্ত্রী
§ধনদাস-  রাজসহচর
§অহল্যাদেবী-    ভীমসিংহের পাটেশ্বরী
§কৃষ্ণকুমারী-  ভীমসিংহের দুহিতা
তপস্বিনী, বিলাসবতী, মনিকা, ভৃত্য, রক্ষক, দূত, সন্ন্যাসী প্রমুখ।

  • কৃষ্ণকুমারী নাটকের মূল কাহিনী



·        প্রথমাঙ্ক

v  প্রথম গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ জয়পুর- রাজগৃহ
চরিত্রাবলিঃ রাজা জগৎসিংহ, মন্ত্রী, ধনদাস

রাজ অনুচর ধনদাস নারীর রূপযৌবনমুগ্ধ ইন্দ্রিয়বিলাসী রাজা জগৎসিংহের কাছে কৃষ্ণকুমারীর চিত্রপট প্রদর্শন করে তাকে উদয়পুরের রাজা ভীমসিংহের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে সম্মত করে। জগৎসিংহ মনে বলেন যে, এই প্রস্তাবে রাজা সম্মত হলে তার জীবন সফল হবে। মন্ত্রীর কাছে কৃষ্ণকুমারীর পাণিপ্রার্থী রূপে মানসিংহের নাম শুনে তিনি উপপত্নীর দত্তক পুত্রকে চন্দ্রের সুধালাভের জন্য প্রসারিত বাহু বামনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মন্ত্রী দেশবৈরীদলের কথা উল্লেখ করে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করলে তিনি দিল্লীর সম্রাটকে বিষহীন ফণী ও মহারাষ্ট্র অধিপতিকে নিতান্ত অর্থলোভী বলে বর্ণনা করেন। ধনদাসকে দূতরূপে উদয়পুরে পাঠাতে তিনি সাব্যস্ত করেন।

রাজকার্য বিষয়ে মন্ত্রী, জগৎসিংহের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। কিন্তু রাজার সময় ক্ষেপণ করার কোন ইচ্ছে নেই। মধুকরের ন্যায় তিনি নারীর রূপসুধা পান করতে উন্মত্ত। তাই তিনি ধনদাসের সাথে এই সম্পর্কে আলোচনা করতে চান। সেজন্য মন্ত্রীকে তিনি বিশ্রামের অজুহাতে সন্ধ্যার পরে পত্রসমূহ দেখার কথা বলেন।

কর্মনাশা ধর্মদাসকে রাজার সামনে উপস্থিত দেখে মন্ত্রী 'একে মনসা তায় আবার ধুনার গন্ধ' এই বিরূপ মন্তব্য করেন। ধনদাসের কাজই হল রাজার কাছে সুন্দরী নারীগণের পরিচয় দান করা যাতে রাজা নিত্য নতুন পুষ্পের মধুপানে উদ্যোগী হতে পারেন। এতে তিনি রাজকর্ম হতে বিচ্যুত হতেন। রাজা ধনদাসের মুখে শুনতে পেলেন যে, অগস্ত্যের ন্যায় বারিশোষণের ফলে জয়পুর রাজ্যের রূপসাগর বারিশূন্য হয়ে পড়েছে। তবে ধনদাস তাকে আশ্বাস দিলেন যে, পৃথিবীতে সপ্তসাগর আছে, সুতরাং তার নৈরাশ্যের কোন কারণ নেই।

রাজকুমারী কৃষ্ণার পরিচয় পেয়ে রাজা জগৎসিংহ উদয়পুরের রাজার মহিমা ও বীরত্ব কাহিনী বর্ণনা করে বলেন যে, সেই বংশের যশঃসৌরভে ভারতবর্ষ পরিপূর্ণ। সুতরাং বিধাতা কৃষ্ণকুমারীকে রাজবংশের সারভুত সৌন্দর্যপুষ্প রূপে সৃষ্টি করেছেন। জগৎসিংহ শুধু ইন্দ্রিয়বিলাসী রাজা নন, তার মধ্যে আভিজাত্য, বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌন্দর্যের প্রতি অণুভূতিপ্রবণ মন সর্বদা পরিলক্ষিত হয়। লক্ষ্মীর অভিশাপ প্রসঙ্গ স্মরণ করে জগৎসিংহ কল্পনা করেন যে, কুমারী কৃষ্ণা কোন ঋষির অভিশাপে স্বর্গচ্যুত হয়ে মর্ত্যলোকে মানবরূপে জন্মগ্রহণ করেছেন। যে বংশে তাঁর বিবাহ হবে সেখানে তিনি সৌভাগ্য-লক্ষ্মীরূপে থাকবেন। রাজা ভীমসিংহ তার হাতে কন্যা সমর্পণে সম্মত হলে তাঁর জন্ম সার্থক হবে।

মরুদেশের রাজা মানসিংহ কুমারী কৃষ্ণার পাণিগ্রহণে ইচ্ছুক, এই কথা মন্ত্রীর কাছে থেকে জানার পর জগৎসিংহ মন্তব্য করেন যে, উপপত্নীর দত্তকপুত্রের পক্ষে এটা উদ্ধত প্রগলভতার পরিচায়ক। কাজেই, মানসিংহ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হলে জগৎসিংহ তাঁকে কঠিন দণ্ড প্রদান করবেন।

কৃষ্ণকুমারীর সাথে বিয়ের প্রস্তাব রাজার কাছে পৌঁছানোর জন্য ধনদাসকে দূতরূপে জগৎসিংহ পাঠাবেন। ধনদাস এমন ভাব করে, যেন মহারাজের কর্মসাধনের জন্য প্রাণদানেও প্রস্তুত। কিন্তু তার আসল উদ্দেশ্য হল রাজপূজায় অর্থ অর্জন করা। রাজা তাকে নলরাজা প্রেরিত রাজহংসের সাথে তুলনা করলে সে সুকৌশলে রাজাকে বলল যে, তার সোনার পাখা নেই। এতে রাজা তাকে অঙ্গুরীয় দান করলেন। রাজা বরাবরের ন্যায় এবারও চতুর ধনদাসের ফাঁদে পা দেন। ধনদাস তাঁকে একটি চিত্রপট বিক্রি করে বিশ হাজার মুদ্রা লাভ করেছে, সৈন্যদলের ব্যয়ের টাকাও হাত করতে পারবে এবং বহুমূল্য মণিও লাভ করল। একমাত্র মন্ত্রী তার পথের কাঁটা। সে রাজ পূজা করে অর্থলাভ করতে আগ্রহী। তার কথা হল যেমন করে হোক নিজের কাজ উদ্ধার করা চাই।

v  দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ জয়পুর- বিলাসবতীর গৃহ
চরিত্রাবলি- বিলাসবতী, মদনিকা, ধনদাস

বিলাসবতী রাজা জগৎসিংহের রক্ষিতা হলেও সে তার অনুরাগিণী। যাকে সে রূপযৌবনের জালায়নে বন্দী করবে ভেবেছিল, প্রেমের প্রাবল্যে তাঁর সে চিরদাসী হয়েছে। বিলাসবতী রূপবতী আর মদনিকা তাকে বিমল সরোবরের বিকশিত পদ্মের সাথে তুলনা করেছে। মদনিকার কাছে ধনদাসের চাতুরীর কথা জানতে পেরে সে সম্ভাব্য বিচ্ছেদের আশঙ্কায় কান্না করে ও ধর্মপথ হতে তাকে বিচ্যুত করার জন্য ধনদাসকে অভিযুক্ত করে। বিলাসবতীর প্রতি মহারাজের অনুরাগের সুযোগ নিয়ে সে উপকৃত হয়েছে। তবে বিলাসবতীর রূপ ও সম্পদের প্রতি তার অনেক আকর্ষণ আছে। মদনিকা বিলাসবতীকে আশ্বাস দিয়ে বলেছে যে, সে চতুর ধনদাসকে বুদ্ধির যুদ্ধে পরাভূত করবে। কৃষ্ণকুমারীর সাথে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে জগৎসিংহ দূত রূপে ধনদাসকে পাঠিয়েছে এই কথা শুনে বিলাসবতী সম্ভাব্য বিচ্ছেদের আশঙ্কায় কাঁদতে লাগলেন।  মদনিকা তাকে ধৈর্য ধারণ করতে বলে, সে বাস্তবিক অর্থে রাজার অনুরাগের জালায়নে বন্দিনী হয়েছে।

বিলাসবতীর রূপ ও সম্পদের প্রতি ধনদাসের বিলক্ষণ লোভ আছে। তাই সে বিলাসবতীর মোহ ছিন্ন করতে পারে না। বিলাসবতীর প্রশ্নে ধনদাস বলে যে, বহুমূল্য অঙ্গুরীয় মহারাজ তাকে রাখতে দিয়েছেন। ধনদাসের চরিত্র জানা থাকায় বিলাসবতী তাকে বিদ্রুপ করে বলেছে যে, মরুভূমি আকাশের জলকে যেমন সযত্নে রেখে দেয়, ধনদাসও মহারাজের সম্পদ সম্পর্কে সেইরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মদনিকা বিলাসবতীকে আশ্বস্ত করে বলে যে, ধনদাস চতুর হলেও তার পক্ষে তাকে জব্দ করা কিছুমাত্র কঠিন কাজ হবে না।
     


·        দ্বিতীয়াঙ্ক

v  প্রথম গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- রাজগৃহ
চরিত্রাবলিঃ অহল্যাদেবী, তপস্বিনী, ভৃত্যসহ রাজা ভীমসিংহ, কৃষ্ণকুমারী

রাজার পরিবারের হিতাকাঙ্কিনী তপস্বিনী রাজমহিষী অহল্যাবাইকে সান্তনা দান করে বলেন যে, তাদের বিপদ কেটে যাবে। রাজা ভীমসিংহ তিন লক্ষ মুদ্রার বিনিময়ে মহারাষ্ট্র অধিপতির স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা জেনে স্বস্তির নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। কিন্তু তার পক্ষে এটা দুর্যোধনের ন্যায় হর্ষ-বিষাদের অবস্থা। ভুবন বিখ্যাত শৈলরাজের বংশধর হয়ে তাকে যে অর্থ প্রদান করে রাজ্যরক্ষা করতে হল, তা তার পক্ষে পরম পরিতাপের বিষয়। তবে আশু বিপদ হতে রক্ষা পেলেন, এটা আনন্দের কথা। রাজমহিষী কৃষ্ণার বিয়ের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলেন। প্রসঙ্গত তিনি রাজকুলে সুন্দরী কন্যা কৃষ্ণা থাকায় বংশের মর্যাদা রক্ষায় বিপদ ও পাদ্মিনীর ইতিহাস স্মরণ করে অনির্দেশ্য ভবিষ্যতের দিকে সঙ্কেত করেছেন। রাজা বাতাবিক্ষব্ধ সাগরের সাথে তাঁর রাজ্যের তুলনা করেন। জয়পুর রাজ্যের দূতের আগমন ঘোষিত হয়। রাজা যেহেতু প্রজাগণের দাস, তার জীবনে যে বিশ্রামের অবকাশ কম, এই কথা বলে বিদায় গ্রহণের পূর্বে তিনি মহিষীর মনকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন।

তপস্বিনী সন্ন্যাসিনী, পার্থিব জীবনের সুখ-দুঃখ তাকে বিচলিত করে না। তবু রাজপরিবারের প্রতি তাঁর বিশেষ মমতা পরিলক্ষিত হয়। রাজা ভীমসিংহ তাঁর রাজ্যের বিপদের কথা তপস্বিনীর কাছে ব্যক্ত করে বিষাদের সুরে বললেন যে, একলিঙ্গের প্রসাদে [একলিঙ্গউদয়পুরের কুলদেবতা শিব বা মহাদেব।] ও তপস্বিনীর আশীর্বাদে রাজলক্ষ্মী এখনও রাজপুরে আছেন কিন্তু তিনি আর বেশিদিন এখানে অবস্থান করবেন কিনা তা বলা কঠিন। যে ভক্তি ও শক্তির প্রসাদে রাজলক্ষ্মীকে অচলা করা যায়, তা তাঁর মধ্যে নেই। রাজ্যের বিপদ ক্রমশঃ ঘনীভূত হয়ে দুর্যোগ সৃষ্টি হচ্ছে। তপস্বিনী রাজাকে আশ্বস্ত করে বললেন যে, ত্রেতাযুগ হতে কমলা রাজপুরীতে অবস্থান করছেন। মাঝে মাঝে এই রাজ্যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু শরৎকালের মেঘাবরণ ছিন্ন করে চন্দ্রের আবির্ভাবের ন্যায় বিপদও এই রাজ্যে কেটেছে ও রাজলক্ষ্মীও আপন মহিমায় উদয়পুরকে পূর্ণ ও পরিব্যাপ্ত করেছেন। এই প্রাচীণ রাজবংশ কখনো প্রাচীন ঐতিহ্য ও গৌরবচ্যুত হবে না। রাজার পক্ষে রাজ্যের সমূহ বিনষ্টির আশঙ্কা নিতান্ত অমূলক। বীর বাপ্পারাওয়ের বংশধর হয়ে রাজ্যরক্ষার্থে রাজাকে অর্থ-বিনিময়ে লোভী মহারাষ্ট্রের অধিপতির সাথে সন্ধি করতে হল, এটা তাঁর পক্ষে অত্যন্ত অসম্মানজনক। আত্ম-অবমাননার এই গ্লানি তাকে পীড়ন করে।

অবিবাহিতা কন্যা কৃষ্ণাকে সুপাত্রে দান করার জন্য অহল্যাবাঈ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছেন। রাজমহিষী অহল্যাবাঈর আশঙ্কা হল যে, রাজকুমারী কৃষ্ণার অপূর্ব সৌন্দর্যের কথা জানতে পারলে হয়ত কোন বিধর্মী মুসলমান সুলতান এসে জোর করে তাকে কেড়ে নিয়ে যেতে পারেন। এই প্রসঙ্গে মহিষী রাজাকে পদ্মিনীর শোকাবহ ইতিহাস স্মরণ করে দিয়েছেন। আলাউদ্দীন খিলজীর রাজত্বকালে চিতোর রাজা ছিলেন লক্ষ্মণসিংহ। কিন্তু তিনি নাবালক ছিলেন বলে তাঁর পিতৃব্য ভীমসিংহ রাজকার্য পরিচালনা করতেন। পদ্মিনীর রূপের ইতিহাস শুনে আলাউদ্দীন চিতোর আক্রমণ করেন। মহিষীকে দর্শন করে তিনি ফিরে যাবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি তাঁকে দর্শন করেন। আলাউদ্দীন ভীমসিংহকে আক্রমণ করে বন্দী করেন, কিন্তু পদ্মিনীর কৌশলে তিনি মুক্তি লাভ করেন। আলাউদ্দীন প্রথম যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পরবর্তী যুদ্ধে জয়লাভ করেন। লক্ষ্মণসিংহ ও ভীমসিংহ উভয়ে নিহত হন। পদ্মিনী চিতানলে আত্মবিসর্জন দেন। কুলমর্যাদার জন্য এই আত্মহুতি প্রসঙ্গের অবতারণা যেন অজ্ঞাতসারে কৃষ্ণার ভবিষ্যৎ নির্দেশ করছে।

কৃষ্ণকুমারীর বিবাহপ্রসঙ্গে মহিষী অহল্যাবাঈ মন্তব্য করেছেন যে, পূর্বকালের ন্যায় বর্তমানে স্বয়ম্বরসভার সমারোহ ব্যবস্থা দূরে থাকুক, কোন রাজবংশে সুন্দরী কন্যা থাকলে সেই বংশের মর্যাদা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিধর্মীগণের ললালুপ দৃষ্টি কন্যার উপরে পতিত হলে সেই বংশের গৌরব রক্ষা করা দুঃসাধ্য। তপস্বিনী রাজা ও মহিষীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, ভারতবর্ষে এই দুর্যোগ চিরস্থায়ী হবে না। অতীতে ভগবান বিষ্ণু বরাহমূর্তি ধারণ করে সাগরে নিমজ্জিতা ধরিত্রীকে উদ্ধার করেছিলেন। সেই ভগবানের করুণা দৃষ্টি পুণ্যভূমি ভারতবর্ষের উপরে আছে। তিনি এই পবিত্র ভূমিকে ভুলে যাবেন না। যদিও এখন কলিযুগ, তথাপি ধর্মের এক পাদ এখনও বর্তমান। বিধাতার নিয়মে অদ্যাবধিও আকাশে চন্দ্রসূর্য উদিত হচ্ছে। অধর্মের গ্লানি বিনাশের জন্য ভগবানের আবির্ভাব ঘটবে। তপস্বিনীর গভীর আধাত্মিক চেতনা ও ধর্মবিশ্বাস কৃষ্ণা ও উদয়পুরের বিপর্যয় রুদ্ধ করতে পারে নি।

v  দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- রাজগৃহ
চরিত্রাবলিঃ মদনিকা (পুরুষের ছদ্ধ বেশে), সত্যদাস, ধনদাস



মদনিকা কৃষ্ণকুমারী নামে রাজা মানসিংহের কাছে পত্র প্রেরণ করেছে। যদুপতির কাছে শিশুপালের হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য রুক্ষিণী দেবীর পত্রের ন্যায় এই লিপি অবশ্য মানসিংহের চিত্তকে অভিভূত করবে এটাই স্বাভাবিক। মদনিকা উদয়পুরের রাজমন্ত্রীকেও বারবিলাসিনী বিলাসবতীর প্রতি জগৎসিংহের আকর্ষণের কথা জানিয়ে ধনদাসের দৌত্যকার্যকে নিস্ফল করতে সচেষ্ট হয়েছে। সে সুকৌশলে ধনদাসের কাছে থেকে রাজা প্রদত্ত অঙ্গুরীয়টি আত্মসাৎ করেছে। এটার পরে নারিবেশে মানসিংহের দূতীরূপে কুমারী কৃষ্ণার কাছে গিয়েছে। মদনিকার চাতুর্য, অসমসাহসিকতা ও মনোবল এই অঙ্কে অতি সুন্দরভাবে পরিস্ফুট হয়েছে।

মদনিকা এখানে রাজা জগৎসিংহকে শিশুপালরূপে বর্ণনা করেছেন। তার ইচ্ছা ধনদাসকে জব্দ করা। সে তাই যদুপতিরূপে মানসিংহের কাছে কৃষ্ণকুমারীর নামে রুক্ষ্মিণীর পত্রের ন্যায় লিপি প্রেরণ করেছে। শ্রীকৃষ্ণ রুক্ষ্মিণীকে গ্রহণ করে শিশুপালের ইচ্ছাকে ব্যর্থ করেছিলেন।

জগৎসিংহ কৃষ্ণকুমারীকে বিয়ের আশায় যদি সারিকারূপ বিলাসবতীকে ত্যাগ করেন তবে ধনদাস তাকে লাভ করতে পারবে। স্বর্ণ অর্থাৎ রাজকুমারী কৃষ্ণাকে লাভ করতে পারলে জগৎসিংহ অনায়াসে তাম্র অর্থাৎ বিলাসবতীকে ত্যাগ করবেন। অর্থলোভী ধনদাসের কাছে রাজার মর্যাদা মুখ্য নয়। রাজার অর্থের সমুদ্রে ডুব দিতে পারলে প্রভূত মণিমাণিক্য লাভ করা যাবে কাজেই রাজার সান্নিধ্য তার কাছে একান্ত কাম্য। মদনিকা কৌশলে ধনদাসের কাছে থেকে অঙ্গুরীয় আদায় করে তবুও সে সন্তুষ্ট নয়। সে তার দৌত্যকার্য নিস্ফল করে রাজার কাছে ধনদাসের প্রতিষ্ঠা নষ্ট করতে কৃতসংকল্প।
তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- রাজ-উদ্যান
চরিত্রাবলিঃ অহল্যাদেবী, তপস্বিনী, কৃষ্ণকুমারী, মদনিকা, রাজা ভীমসিংহ, ভৃত্য

জগৎসিংহের সাথে কৃষ্ণার বিবাহ প্রস্তাবে তপস্বিনী ও মহিষী অহল্যাবাঈ আনন্দিত হয়েছেন কিন্তু কন্যার সাথে বিচ্ছেদের আশঙ্কায় মাতৃহৃদয় কাতর হয়ে ওঠে। মদনিকা কৃষ্ণার কাছে মানসিংহের স্বপ্নদর্শন ও লোক মুখে তার গুণের কথা শুনে বিমুগ্ধ হবার খবর বর্ণনা করে তার মনকে রাজার প্রতি অনুকূল করার দিকে সচেষ্ট হয়েছে। মদনিকা তাই কৃষ্ণার মনকে মানসিংহের অনুকূল করতে চায়। তা হলে জগৎসিংহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হবে। তাই সে কৃষ্ণাকে বলে মানসিংহ আপনার রূপ প্রথমে স্বপ্নে দেখেন মরুদেশের রাজা মানসিংহ দূত পাঠিয়েছেন, এই সংবাদ শুনে ভীমসিংহ বিস্মিত হলেন। মদনিকা মানসিংহের তথাকথিত একটি চিত্রপট দেখিয়ে কুমারী কৃষ্ণার মনকে মুগ্ধ ও চঞ্চল করে তুলল।

যে স্বামী গুণহীন তার হাতে স্ত্রীলোকের শোভা, শুচিতা ও সংযম বিনষ্ট হয়। ধর্মপরায়ণ ও বিদ্যানুরাগী জগৎসিংহের হাতে কন্যাকে দান করতে পারলে মাতৃহৃদয় আশ্বস্ত হবে। কৃষ্ণা মাতাপিতার নয়নের মণিরূপ ও জীবনের সম্পদ। বিয়ের পরে পতিগৃহে সে চলে গেলে তাঁদের গৃহ অন্ধকার হয়ে যাবে। কী নিয়ে তারা জীবন ধারণ করবেন? অহল্যাবাঈ যেন অজ্ঞাতসারে ভবিষ্যৎ জীবনের অশুভ ইঙ্গিত দান করেছেন।

ধনদাসের বুদ্ধির অহমিকা মদনিকার মনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভাব সৃষ্টি করে। মদনিকা মানসিংহের চিত্রপটের নামে অন্য এক পুরুষের চিত্র দেয় যা কৃষ্ণার মনকে অভিভূত করেছে। চিত্র যাই হোক না কেন কোন ক্ষতি নেই, কুমারীর মনকে মানসিংহের প্রতি আকর্ষণ করতে পারলেই তার অভিপ্রায় সিদ্ধ হবে। তার মতে, কাঠের বিড়াল যদি ইঁদুর ধরতে পারে তা হলেই হল। মদনিকার দৌত্যকার্য সফল হয়। কৃষ্ণার মনে মানসিংহের প্রতি পূর্বরাগ সৃষ্ট হয় তাই সে বলে, নির্জনে চিত্রপটখানি দেখেছি।


·        তৃতীয়াঙ্ক

v  প্রথম গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- রাজনিকেতন-সম্মুখে
চরিত্রাবলিঃ মরুদেশের দূত, মদনিকা, ধনদাস, সত্যদাস, বলেন্দ্রসিংহ, রক্ষক

মদনিকার প্ররোচনায় মানসিংহের দূতের সাথে ধর্মদাসের কলহ সৃষ্টি হয়। মরুদেশের দূত জগৎসিংহের বিদ্যা যে শুধু নৃত্যে, গীতে ও প্রেমালাপে এই কথা বললে ধনদাস অম্বর দেশের সৌন্দর্য বর্ণনা করে তার রাজাকে শশধরের সাথে উপমিত করে। মানসিংহের দূত বিদ্রূপ করে রাজাকে শশধরের ন্যায় কলঙ্কী বললে- ও দূতকে পেচকের স্বভাবের সাথে তুলনা করে প্রত্যুত্তর দেয়। মহারাষ্ট্রপতির দূতের আগমন ঘোষিত হলে সকলে রাজসভার দিকে যাত্রা করে। মদনিকা জয়পুরে যাত্রার পূর্বে বিধাতার কাছে কুমারী কৃষ্ণার মঙ্গল প্রার্থনা করে।

মদনিকা পুরুষবেশে মরুদেশের দূতের নিকেট কৃষ্ণার অনুরাগের কথা ও ধনদাসের রাজনিন্দার কথা জানিয়ে তাকে যুগপৎ আশ্চর্যান্বিত ও ক্রদ্ধ করে তুলে। মদনিকা তাকে পরামর্শ দিল তিনি যেন অন্য কোন প্রকার অত্যাচারের বিষয় না ভেবে ধনদাসকে বাক্যবাণে জর্জরিত করেন। রাজদূত শৃগালরূপ ধনদাসের মুখে মানসিংহের নিন্দা শুনে অতিশয় ক্রুদ্ধ হলেন। মদনিকাও এই গোলযোগ সৃষ্টির জন্য আনন্দিত হল।

রাজ সেনাপতি বলেন্দ্ৰসিংহের অনুরোধে ধনদাস আকাশের ন্যায় সুবিস্তৃত, উদার, গুণসম্পন্ন অম্বরের পরিচয় দিয়ে বলল যে, সেই দেশের অঙ্গনাগণ নক্ষত্ররাজির ন্যায় মনোহারিণী, বিদ্যুৎগর্ভ ও বারিপূর্ণ মেঘের ন্যায় রাজভাণ্ডারেও প্রভূত ধনসম্পদ আছে। সেখানে শক্তি ও সম্পদ উভয়েরই বর্তমান। আকাশে চন্দ্রের ন্যায় মহারাজ জগৎসিংহ অম্বর দেশে আপন ঔজ্জল্য এ দেদীপ্যমান।

কুমারী কৃষ্ণার চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য মদনিকাকে আকৃষ্ট করে তাই উদয়পুর ত্যাগের পূর্বে মদনিকার নারি-চিত্ত কুমারী কৃষ্ণার মঙ্গল-চিন্তায় ব্যাকুল হয়েছে। সে জয়পুর ও মরুদেশের রাজদ্বয়ের মধ্যে যে বিবাদ সৃষ্টি করেছে তা যদি দাবানলের রূপ ধারণ করে তাহলে তা উদয়পুরকে দগ্ধ করতে পারে। তার একমাত্র প্রার্থনা হল যে, বনহরিণীর ন্যায় শান্তস্বভাবা সুশীলা রাজকন্যার যেন কোন অমঙ্গল না হয়। ঈশ্বর যেন সকল দুঃখ-তাপ হতে তাকে রক্ষা করেন।


v  দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃউদয়পুর- রাজ-উদ্যান
চরিত্রাবলিঃ তপস্বিনী, কৃষ্ণকুমারী, অহল্যাদেবী, তপস্বিনী, রাজা ভীমসিংহ

তপস্বিনী কৃষ্ণার পাণিপ্রার্থী দুই হাজার আসন্ন বিগ্রহ হেতু উদয়পুরের সম্ভাব্য বিপর্যয়ে ও কৃষ্ণাকে নিয়ে ত্ৰিপতিতে তাঁর স্বপ্নদর্শনে শঙ্কিতা হয়েছেন। মানসিংহের প্রতি কুমারীর অনুরাগের কথা তিনি রাজমহিষীকে জ্ঞাপন করলেন। উভয় রাজার বিবাদে মহারাষ্ট্রপতির মানসিংহের পক্ষে যোগদান রাজা ভীমসিংহের মনকে উদ্বিগ্ন করেছে। রাজা দুঃখ করে বলেন যে, তাঁর কাছে অমৃতও বিষ হয়ে উঠল। কৃষ্ণার কাছে পদ্মিনী আবির্ভূত হয়ে কুলমর্যাদা রক্ষাকল্পে জীবন বিসর্জন দিয়ে তাকে সুরপুরে আগমনের আহ্বান জানালেন।

তপস্বিনী ত্ৰিপতিতে অবস্থানকালে গোবিন্দরাজের মন্দিরে কৃষ্ণাকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। তাই যেন মানসিংহ ও জগৎসিংহের অবশ্যম্ভাবী সংঘর্ষের মাধ্যমে সফল হতে চলছে। এদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে বনস্থলীর অর্থাৎ উদয়পুরের বিপর্যয় ঘটবে। তপস্বিনী ভবিষ্যতের চিত্র কল্পনায় প্রত্যক্ষ করে অত্যন্ত শঙ্কিত হয়েছেন। মানসিংহের প্রতি কৃষ্ণার অনুরাগের কথা তপস্বিনীর কাছে জানতে পেরে মহিষী অহল্যাবাঈ বিস্মিত হয়েছেন, কেননা, কুমারী তাঁকে কখনো দেখেননি।

যৌবনে হৃদয়ের অনুভূতি অপর হৃদয়ের আশ্রয় প্রার্থনা করে। বসন্তকালে কোকিল যেমন পঞ্চস্বরে আপন হৃদয়ের কথা ব্যক্ত করে, নরনারীর হৃদয়ও যৌবনে তেমিন প্রকাশের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই রাজকুমারী তার হৃদয়ের ভাব যেন সঙ্গীতের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। তপস্বিনী সন্ন্যাসিনী; অনিদ্রা, নিরাহার ও তপস্যা, এই ত্রিবিধ কৃত্যসাধনার মাধ্যমে মন সংসারের মায়ামোহ হতে মুক্তি লাভ করতে পারবে, এটা ছিল তার বিশ্বাস।

কৃষ্ণার বিবাহ নিয়ে জয়পুর মরুদেশের রাজদ্বয়ের মধ্যে অবশ্যম্ভাবী সংঘর্ষ ও এটাতে মহারাষ্ট্রপতির যোগদান উদয়পুরেরপক্ষে অশুভ ইঙ্গিত দান করে। তাই রাজা দুঃখ করে মহিষীকে বলেছেন যে, তার প্রাণ-প্রতিম কন্যা তার জীবনকে দগ্ধ করার জন্য অগ্নিশিখারূপে যেন আবির্ভূতা হয়েছে। তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ধন যে তাঁর সর্বনাশ করবে তা তিনি কল্পনা করেন নি।

কৃষ্ণা যেন প্রকৃতি-দুহিতা, নিসর্গ-জীবনে উভয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মানসিংহের প্রতিকৃতি দেখে কৃষ্ণার মনে পূর্বরাগের সঞ্চার হয়েছে। কিন্তু প্রেমাস্পদকে লাভ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আক্ষেপানুরাগের মাধ্যমে কুমারী নিজের বিরহের আর্তিকে প্রকাশ করে বলেন, কেনই বা সে চিত্রপট দেখেছিলাম কুমারীও হয়ত অনুমান করেছেন যে, তাঁকে নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই রাজার সম্ভাব্য সংঘর্ষে উদয়পুরের বিপদ ঘটবে, তাই পদ্মিনীর আহ্বান তাঁর বিশ্বাসনিষ্ঠ সরল অন্তঃকরণকে আকৃষ্ট করেছে।


v  তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- নগরতোরণ
চরিত্রাবলিঃ বলেন্দ্রসিংহ, কতিপয় রক্ষক, সত্যদাস, ধনদাস,

মহারাষ্ট্রপতি অর্থলোভী, অহিতকারী ও ধূর্ত ব্যক্তি। তিনি মানসিংহের পক্ষাবলম্বন করেছেন। রাজা ভীমসিংহ বাধ্য হয়ে জয়পুরে দূতকে বিদায় দিয়েছেন। রণপ্রিয় না হলেও জগৎসিংহ যে এই অপমান সহ্য করবেন না, এটা এই দৃশ্যে আভাসিত হয়েছে। মন্ত্রী সতদাস ধনদাসকে মিষ্ট কথায় বিদায় দিলেন। তিনি তাকে একটি বহুমূল্য অঙ্গুরীয় দিলেন। ধনদাস অর্থলাভে খুশি হল। তার একটি দুঃখ হল যে, বিলাসবতীকে না ছাড়তে হয়। তার ধারণা, একটি বারাঙ্গনার মন চুরি করা তার পক্ষে অসম্ভব হবে না। ধনদাসের দৌত্য ব্যর্থ না হওয়ায় সে খুব দুঃখিত হয়নি। জগৎসিংহের মান-অপমানের প্রশ্ন তার কাছে বড় নয়। দস্যুদল তার ধনরত্ন লুণ্ঠন করেছে এবং মানসিংহের দূতের কাছে সে অপমানিত হয়েছে, এটা তার জন্য সন্তাপের বিষয়। রাজা প্রদত্ত মূলবান অঙ্গুরীয় লাভ করে তার হৃদয়বেদনা প্রশমিত হল।

ধনদাসের নিজের বুদ্ধির উপরে গভীর আস্থা। তার বিশ্বাস বিধাতা যাকে বুদ্ধি দান করেন, তাকে সকল ঐশ্বর্য দান করেন। কিন্তু উদয়পুর তার পরাজয়ের ইতিহাস অবগত নয়। মদনিকা যে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে তার প্রভূত ক্ষতিসাধন করেছে ও করে চলছে, সে এটা জানতে পারেনি। মহারাজ জগৎসিংহ যদি তার দৌত্যকার্যের অসাফল্যের জন্য অসন্তুষ্ট হন তবে সে তার ধনবলে অন্য রাজ্যে গিয়ে বাস করবে। ধনদাসের বক্তব্য ও দ্বিতীয় রক্ষক কর্তৃক তার আচরণের বর্ণনার মধ্যে দৃশ্যটি সমাপ্ত হয়।
·        চতুর্থাঙ্ক

v  প্রথম গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ জয়পুর- রাজগৃহ
চরিত্রাবলিঃ রাজা জগৎসিংহ, মন্ত্রী

উদয়পুরের রাজার প্রত্যাখ্যানের ফলে জগৎসিংহ নিজের মর্যাদাকে ধন ও জীবনের চেয়ে অধিকতর শ্রেয় মনে করে মানসিংহকে সমুচিত শাস্তিদানের জন্য মরুদেশের সিংহাসনে ধনকুলসিংহের দাবীকে সমর্থন করার সঙ্কল্প করেছেন। মন্ত্রী তাঁকে বিশম কাণ্ডে নিবৃত্ত হবার পরামর্শ দিলেন, কিন্তু জগৎসিংহের কাছে জীবন অপেক্ষা যশঃ কাম্য। তিনি অপমান সহ্য করতে সম্মত নন। মন্ত্রী এই বিপর্যয়ের জন্য ধনদাসকেই দায়ী করলেন।

রাজা তাকে অবহেলা করে মানসিংহকে কন্যা সম্প্রদান করবেন, এই সংবাদে জগৎসিংহ ক্রুদ্ধ হলে মন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, রাজাকে বাধ্য হয়ে এই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, তিনি তাঁর প্রতি স্নেহপরায়ণ। মন্ত্রী রাজাকে সংঘর্ষ হতে নিবৃত্ত থাকার পরামর্শ দিলে জগৎসিংহ বললেন যে, রাজার কাছে মর্যাদা সর্বাপেক্ষা কাম্য। ধন ও জীবন বিসর্জন দিয়ে এটাকে রক্ষা করা তার কর্তব্য। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হলে তা যে সমগ্র রাজস্থানের ভয়াবহ ক্ষতি করবে মন্ত্রী এই চিন্তায় অভিভূত হয়েছেন। এদিকে রাজা জগৎসিংহ ভোগজীবন পরিহার করে ক্ষত্রীয় ধর্মের পরিচয় দানের জন্য উন্মুখ হয়েছেন।

v  দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ জয়পুর- বিলাসবতীর গৃহ
চরিত্রাবলিঃ বিলাসবতী, মদনিকা, রাজা জগৎসিংহ, ধনদাস, রক্কক

মদনিকা বিলাসবতীকে মানিনী নায়িকার ভূমিকা অভিনয়ের পরামর্শ দিয়েছে। রাজা এসে তার পায়ে হাত দিলে বিলাসবতী তাঁকে তার পরিহাসের কথা বলে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। শ্রীরাধিকা মান করলে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পদযুগল ধরে মান ভঙ্গ করতেন। মদনিকা বিলাসবতীকে সেই ভূমিকা অভিনয়ের কথা বলেছে। এতে রাজার কাছে তার সমাদর বাড়বে। ধনদাসের জন্যই আজ বিলাসবতীর এই অবস্থা তাই তাকে ফাঁদে ফেলার জন্য যে আয়োজন মদনিকা করেছে, এর থেকে তার উদ্ধারের উপায় নেই।

তারপর জগৎসিংহ আসেন বিলাসবতীর কাছে, তখন জগৎসিংহের কণ্ঠে সত্যিকার অনুরাগের সুর ধ্বনিত হতে দেখা যায়। মদনিকার বুদ্ধিদীপ্ততায় রাজা নেপথ্য থেকে ধনদাসের রাজ-নিন্দা স্বকর্ণে শুনে তাকে কঠোর শান্তিদানের প্রবৃত্ত হলে বিলাসবতীর অনুরোধে তাকে প্রাণদণ্ড না দিয়ে রাজ্য হতে বহিষ্কার ও তার সম্পত্তি ব্রাহ্মনদিগের মধ্যে বিতরণের আদেশ দিলেন। রাজা পরদিন প্রভাতে যুদ্ধযাত্রার কথা জানালেন। বিলাসবতীকে রাজা তার কথা স্মরণ রাখতে অনুরোধ করেন।


v  তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ জয়পুর- নগরপ্রান্তে রাজপথ-সম্মুখে দেবালয়
চরিত্রাবলিঃ দেবালয়ের গবাক্ষদ্বারে বিলাসবতী ও মদনিকা, নীচে মন্ত্রীর প্রবেশ, নীচে দরিদ্রবেশে ধনদাস

রাজার বিদায় উপলক্ষে বিলাসবতী বিচ্ছেদের দুঃখে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েন। তার চোখ জলে টলমল করে মন্ত্রীকে এইদিকে আসতে দেখে ভাবেন মহারাজা যেন আবার ফিরে আসছেন। সামান্য একটি বিষয়কে অবলম্বন করে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম অনুষ্টিত হতে চলছে তা সমগ্র রাজস্থানকে বিপর্যস্ত করবে। একটি ক্ষুদ্র অগ্নিকণা যে দাবানল জ্বালাতে চলছে তা অতি শোকাবহ, মন্ত্রী এতে খুব উদ্বিগ্ন হয়েছেন।

শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় গেলে শ্রীরাধিকা বৃথা তাদের পূর্ব-মিলনের কথা স্মরণ করে অশ্রু বিসর্জন করেছিলেন। বিলাসবতীও তাই করছে। মদনিকা পরিহাস করে তাকে বলেছে যে, শ্রীকৃষ্ণ মথুরায় কুজাকে নিয়ে কেলি করেছিল, তদ্রুপ রাজাও কুজারূপ কৃষ্ণার আশায় উদয়পুরে যাচ্ছেন।

রাজা ধনদাসকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করার পর, ‘প্রভু আমার অশ্রুজলে আত্মাকে ধৌত কর’ এই বলে ধনদাস অনুশোচনা করে। ধনদাসের দুর্গতি দেখে মদনিকার নারী চিত্ত করুণায় বিগলিত হয়। কারণ মদনিকার বুদ্ধিদীপ্ততার জন্যই ধনদাসের আসল রূপ উন্মোচিত হয়েছে রাজার কাছে আর এজন্যই তার এই দুর্গতি। মদনিকা তাই ধনদাসকে আশ্বাস দেয় যে, সে তার দুর্গতি দূর করে দিবে। তার কোন ভয় নেই, পূর্বের ন্যায় সে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে।

·         পঞ্চমাঙ্ক

v  প্রথম গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- রাজগৃহ
চরিত্রাবলিঃ রাজা ভীমসিংহ, মন্ত্রী, বলেন্দ্রসিংহ, ভৃত্য

ভীমসিংহ দুঃখ করে বলেছেন যে, কৃষ্ণাকে কেন্দ্র করে ঝটিকাবর্ত সৃষ্ট হয়েছে। মানসিংহের দলে নবাব আমীর খার যোগদান রাজার উদ্বেগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রীপ্রদত্ত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পত্র রাজা ও বলেন্দ্ৰসিংহকে অত্যন্ত বিচলিত করে তুলল। রাজা বলেছেন যে, চিকিৎসক কটু ঔষধের ব্যবস্থা করলেও রোগ নিরাবরণে সুনিপুণ। মন্ত্রী উদয়পুরের রাজবংশের রাজসতীগণের আত্মবিসর্জন ও নরপতির একের প্রাণের বিনিময়ে সহস্র প্রাণ রক্ষার দায়িত্বের কথা ব্যাখ্যা করেছেন। প্রাণপ্রতিমা কৃষ্ণার চিন্তায় রাজা মুর্ছিত হয়ে পড়েন।

রাজা ভীমসিংহ তাঁর অসহায় অবস্থা বর্ণনা করে বলেন যে, তার কোষাগার অর্থশূন্য, রাজ্যে বীর সেনানীর অভাব। অভিমন্যুর ন্যায় শত্ৰুপরিবেষ্টিত হয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় আছেন তিনি। তাঁর প্রতিরোধের ক্ষমতা নেই। ভীমসিংহ বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করেছেন সত্য কিন্তু বাপ্পারাওয়ের বংশধরের মুখে হাতশাব্যঞ্জক অসহায় উক্তি অতি দুঃখকর। উদয়পুরের রাজারা বীরের ন্যায় মৃত্যুবরণ করতে জানেন। যে বহুমূল্য মুকুট ভীমসিংহের মস্তকে শোভা পায়, তা যে তাঁকে অগ্নিশিকার ন্যায় নিয়ত দগ্ধ করে চলছে। তার গৃহে কৃষ্ণা জন্মগ্রহণ করে তার দুঃখকে শতগুণে বর্ধিত করেছে। সাগর যেমন ঝড়ে আলোড়িত হয়, তেমনি উদয়পুরকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক ঝটিকাবর্ত সৃষ্ট হয়েছে তাতে অনেক রাজবীর যোগদান করেছেন। উদয়পুরের সেনাপতি বলেন্দ্ৰসিংহের অন্তরে ক্ষত্রীয়শৌর্য আছে। তিনি তার পরীক্ষা দিতে চান কিন্তু নিয়তিনির্ভর রাজা তাকে ভাগ্য লিখনের কথা বলে নিরস্ত করেন।

কৃষ্ণাকে পত্রে দেয়া মর্ম অনুযায়ী বিসর্জন দিতে পারলে বিপদ হতে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। কিন্তু বিচক্ষণ মন্ত্রীর এটা মনে হল না যে, দাবী ঐ স্থানে শেষ হবে না। দুর্বলতার পরিচয় পেলে আক্রমণকারীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে, নতুন দাবী পেশ করবে। রাজা ভীমসিংহ স্নেহময় পিতা। প্রাণপ্রিয় কন্যাকে বিসর্জন দিতে হবে, এই চিন্তায় অন্তরে তার আলোড়িত হয়েছে। তাই তার মনে হয়েছে যে, পত্রের অজ্ঞাতনামা লেখক অপত্যস্নেহের মর্ম অবগত নয়। 

দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- একলিঙ্গের মন্দির-সম্মুখে
চরিত্রাবলিঃ ভৃত্য, বলেন্দ্রসিংহ, মন্ত্রী, চারজন সন্ন্যাসী,  রক্ষক

ভৃত্য ও রক্ষকের কথপোকথন থেকে রাজা বলেন্দ্ৰসিংহের মানসিক অধর্য্যতা ও কাতরতার পরিচয় পাওয়া যায়। মন্ত্রী এসে বলেন্দ্ৰসিংহকে কর্তব্য পালনে অনুরোধ করলে তিনি প্রাণ-পুত্তলিকা কৃষ্ণার জীবননাশে ঘোরতর আপত্তি জানালেন। সন্ন্যাসীদের মুখ হতে জানা গেল যে, দেবদেবের চক্ষু হতে জলধারা পড়ছে, রাজভবন হতে রক্তস্রোত নির্গত হচ্ছে ও অগ্নিতে লক্ষ্মীদেবী ভস্মীভূত হওয়ায় দেবগণ হাহাকার করছেন । আজকের রাত যেন ভীষণ ভয়ঙ্কর চারদিকে ঘোরতর অন্ধকার ও মেঘগর্জন রাতের ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি করেছে। রাজার আদেশ পেয়ে নিষ্ঠুর কর্তব্য পালনের জন্য বলেন্দ্ৰসিংহ যাত্রা করেন। রাতের প্রলয়কালীন রূপ রাজার অন্তরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। মানসচক্ষে বলেন্দ্ৰসিংহের কর্ম প্রত্যক্ষ করে তিনি জ্ঞান হারান ।

মধ্যযুগে নিয়তির উপরে মানুষের একান্ত বিশ্বাস ছিল। নিয়তির বিধান কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না। অশুভ কর্মের ইঙ্গিত পূর্ব হতে পাওয়া যায়। তাই সন্ন্যাসিগণ কৃষ্ণার আত্মহননের পূর্বে চতুর্দিকে যেন বিপদের ছায়া প্রত্যক্ষ করছেন। মন্ত্রীও কৃষ্ণার মৃত্যুর পরে বলেছেন, ‘হে বিধাতঃ, তোমার কি অদ্ভুত লীলা!'

প্রকৃতির প্রলয়-কালীন রূপ রাতের ভয়ঙ্কর কার্যের সাথে সঙ্গতি বজায় রেখেছে। রাজার অন্তরের অন্ধকার, আলোড়ন ও মর্মবেদনাই যেন বাহিরের দুর্যোগের প্রতিচ্ছবি। কৃতকর্মের আত্মগ্লানি জন্য রাজা বিধাতার কাছে স্বীয় মৃত্যু কামনা করেন।
v  তৃতীয় গর্ভাঙ্ক

স্থানঃ উদয়পুর- কৃষ্ণকুমারীর মন্দির
চরিত্রাবলিঃ অহল্যাদেবী, তপস্বিনী, খড়্গস্তে বলেন্দ্রসিংহ, কৃষ্ণকুমারী, রাজা ভীমসিংহ, মন্ত্রী, অহল্যাদেবী

কৃষ্ণকুমারী নাটকের পরিণতি দৃশ্য অনেক মর্মান্তিক রূপ পরিগ্রহণ করে। রাজমহিষী কৃষ্ণার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। তার হৃদয় অত্যন্ত ব্যাকুল হয়েছে। মাতৃহৃদয়ের আশঙ্কা সত্য হতে চলছে। স্বপ্নের কোন বাস্তব প্রতিষ্ঠা নেই। এটা কুহকিনী নিদ্রাদেবীর কৌশল মাত্র। বলেন্দ্ৰসিংহ রাজাদেশ পালন করতে কৃষ্ণার শয়ন-মন্দিরে এসেছেন। সেইদিনের রাত বড় ভয়ঙ্কর ছিলো যা নিষ্ঠুর কাজের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। রাত্রি দুইপ্রহরে তপস্বিনী কুমারীর কাছে থেকে বিদায় গ্রহণ করেন, মহাপ্রলয় প্রত্যক্ষ করে কৃষ্ণা দুঃখী মানুষদের দুর্ভাগ্যের প্রতি সমবেদনা জানান এইক্ষেত্রে তার সরলতা ও করুণার পরিচয় পাওয়া যায়। তার মন পিঞ্জরাবদ্ধ পাখর ন্যায় যেন মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল হয়েছে।
বলেন্দ্ৰসিংহ সেনানায়ক। স্বভাবত তাঁর হৃদয়কে স্নেহ-মমতা দুর্বল করতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণার প্রতি তাঁর স্নেহ তাঁর কঠিন হৃদয়কেও দুর্বল করেছে। রাজকুমারী শয়ন করলে বলেন্দ্রসিংহ হত্যার জন্য অসি উত্তোলন করলেন, কিন্তু কৃষ্ণার ঘুম ভেঙ্গে গেল। অনুতপ্ত বলেন্দ্র উদয়পুরের প্রত্যাসন্ন বিপদের কথা তাকে জ্ঞাপন করলেন।

রাজনন্দিনী মৃত্যুভয়ে ভীত নন। যে রাজবংশের তিনি দুহিতা, তার পক্ষে মৃত্যুভয়ে শঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই। এই সময়ে পদ্মিনীর আবির্ভাবে কুমারী তার মন প্রস্তুত করলেন। ক্ষিপ্ত অবস্থায় রাজা এবং মন্ত্রী প্রবেশ করলেন। কুমারী কৃষ্ণা খুল্লতাতকে বললেন যে, জীবমাত্রই শমনের অধীন। সকলের ভাগ্যে মৃত্যু যশোধায়ক হয় না। কুলমান রক্ষার্থে অথবা পরের হিতে যিনি প্রাণ বিসর্জন দেন, তিনি হন মৃত্যুঞ্জয়ী। কৃষ্ণকুমারী পিতার কাছে বিদায় প্রার্থনা করলে উন্মত্ত রাজা তাকে মানসিংহের দূত মনে করে কটুক্তি করলেন। হল। বিদায়ের পূর্বে কুমারী কৃষ্ণা পিতার কাছ থেকে স্নেহপূর্ণ ব্যবহার না পেয়ে তার মন অত্যন্ত বিচলিত হয়েছে। আকাশে কোমল বাদ্য শ্রুত হল। কৃষ্ণকুমারী আত্মহনন করলেন। তপস্বিনীর পশ্চাতে অহল্যাদেবী এসে এই মর্মন্তুদ দৃশ্য দেখে রাজাকে অভিযুক্ত করলেন ও দ্রুতবেগে প্রস্থান করেন। অন্তঃপুরে রোদনধ্বনি উথিত মহিষীর স্থির বিশ্বাস হল যে, কন্যার মৃত্যুর জন্য রাজা ভীমসিংহ দায়ী। সুতরাং তার হাত অপবিত্র। তার বক্তব্যের মধ্যে অভিযোগের সুর উত্থাপিত হয়। তপস্বিনী অন্তঃপুর হতে এসে সংবাদ জানালেন যে, রাজমহিষীও মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। রাজা জ্ঞানশূন্য। বলেন্দ্র বলেছেন, এমন সময়ে জ্ঞান থাকার চেয়ে অজ্ঞান হওয়া ভাল। মন্ত্রী বলেন্দ্ৰসিংহকে কর্তব্য পালনের জন্য অনুরোধ করলেন।


তথ্যসূত্র-


  • ·        ভবানীগোপাল সান্যাল সম্পাদিত  | কৃষ্ণকুমারী | মাইকেল মধুসূদন দত্ত 
  • ·        ইন্টারনেট


লিখেছেন মো. এনামুল হাসান কাওছার, শিক্ষার্থী- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।



No comments

Powered by Blogger.