তরুণরা এগিয়ে আসলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ
![]() |
কাল্পনিক স্থিরচিত্র |
ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা এবং ভালোলাগা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা: লুবনা সরকার।
করোনা ভাইরাসের কারণে প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের মাঝে। এ মানুষ গুলোর মুখে আহার তুলে দিতে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কাজ করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর সহযোগি সংগঠন ঢাকা ইয়েস-২ এর অন্যতম সদস্য লুবনা সরকার। এছাড়াও তিনি টিআবির ঢাকা ইয়েস থিয়েটার এবং কোরিওগ্রাফি টিম এরও সদস্য। টিআইবির ঢাকা ইয়েস ২ এর সাথে দীর্ঘ পথচলায় লুবনা সরকার বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে যাচ্ছেন আন্তরিকতার সহিত। করোনা পরিস্থিতিতে তার অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন মোঃ সাখাওয়াত হোসেন।
ইউনিভার্সিটি অব ডেভলপমেন্ট অল্টারনেটিভ এর মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী লুবনা সরকার শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে। লকডাউনের সুবাদে পাড়ি জমান লালমনিরহাট প্রপার মেইনটাউন এর ড্রাইভার পাড়ায়, সেখানেই তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের কল্যাণার্থে দীপ্তি ছড়িয়ে।
কেন আপনি এগিয়ে এলেন এবং কাদেরকে ত্রাণ প্রদান করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি নিজ উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছিলিাম নিজের ব্যক্তিগগত হিসাবে জমানো ১৫,০০০/= (পনেরো হাজার) টাকা দিয়ে। তারপর সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আমার বাবা-মা, আমার ছোট দুইবোন এবং আমার বড় দুই ভাই। অর্থাৎ, আমরা পারিবারিক উদ্যোগে এগিয়ে আসি নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের সাহায্যার্থে।
এমন সব পরিবারকে আমরা সহযোগিতা করি, যারা তাদের অভাবের কথাটা লোকলজ্জার ভয়ে বলতে পারেছেনা। আমরা অনেকে আছি যারা সাহায্য করে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছি। এজন্য, যাদের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন তারা মুখ ফুটে বলতে পারছেনা কিংবা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর দো-টানায় হতভম্ব। আর সেই সমস্ত পরিবারের জন্য শুরু করলাম সন্ধ্যা কিংবা রাতের আঁধারে তাদের খোঁজ নিয়ে ত্রাণবিতরণ কার্যক্রম। কিছু পরিবার আছে যারা পেশায়- দিনমজুর কিংবা পানের দোকানদার। রেললাইনের দ্বারে হত দারিদ্র পরিবারেরও আমরা সহযোগিতা করেছি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ছিল ১০কেজি চাল, ডাল, আলু, লবন, সাবান, তেল ও পেঁয়াজ। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সকলের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছিল বিধায় তাদের ৫ কেজি চাল, ডাল, তেল, আলু, লবন, সাবান দিয়েছি। ঈদ সময় আমি আমার প্যাকেটে যোগ করেছি সেমাই, চিনি ও দুধ।
এখন আমি আমার বিকাশ নাম্বার আত্মীয় স্বজন এবং বন্ধুদের দিয়েছি আমার কার্যক্রম চালিয়ে যাবার জন্য।
এই কার্যক্রমে কোনো স্মরণীয় ঘটনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
আমার দেখা সবচাইতে কষ্টের মুহূর্ত ছিল- একজন মহিলা যার স্বামীর দুইটি কিডনী নষ্ট, যার অবস্থা ছিলো সংকটাপন্ন। তার পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কেবল তিনিই ছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও মানুষের দোকানে মালামাল পরিবহন করতেন ছোট একটা ভ্যান গাড়িতে কিন্তু লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ও তার শারীরিক অসুস্থতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আয়-রোজগার একেবারেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় ওই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা এবং ভালোলাগা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবোনা। সবশেষে বলবো তরুণরা এগিয়ে আসলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
No comments