দ্যা ডেইলি এজুখেইশনে বিজ্ঞাপন দিতে কল করুন

+88 01521 20 70 54 (Call for Ad)

মাইকেল চেখভের অনুপ্রাণিত অভিনয়ের ছক- মালা পাওয়ার্স

মাইকেল চেখভের অনুপ্রাণিত অভিনয় পদ্ধতি

মাইকেল চেখভের অনুপ্রাণিত অভিনয়ের ছক (Michael Chekhov's Chart for Inspired Acting)

— মালা পাওয়ার্স

ক্যালিফোর্নিয়ার বিভারলি হিল্‌সে অভিনেতা অ্যাকিম তামিরফের বাসভবনে পেশাদার অভিনয়শিল্পীদের জন্য চেখভ কর্তৃক গৃহীত সাপ্তাহিক ক্লাসসমূহে আমি ১৯৪৯ সালে অংশগ্রহণ করি। এছাড়া, অনেক আগে চেখভের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষাগ্রহণ করতাম। একদিন যখন আমি তাঁর বাসায় ক্লাস করতে গেলাম, তখন মিশা – যে নামে আমি তাঁকে ডাকতাম – তাঁর নিজহাতে আঁকা 'অনুপ্রাণিত অভিনয়ের ছক' আমাকে দিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, এটা তাঁর অভিনয়-শৈলীর সংক্ষিপ্তসার।

মিশা তাঁর বসবার ঘরের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে নিজের চারদিক ঘিরে একটি কাল্পনিক বৃত্ত আঁকতেন; এর দ্বারা তিনি ব্যাখ্যা করতেন যে, ছকটি অভিনেতাকে ঘিরে অঙ্কিত এমন একটি বৃত্তের সৃষ্টি করে (ছক দ্রষ্টব্য)। ছকে উল্লিখিত আবহ, চরিত্রায়ণ বৈশিষ্ট্যাবলী ইত্যাদি সমস্ত প্রয়োগ-কৌশলসমূহকে তিনি বৃত্তের পরিধিতে সজ্জিত বৈদ্যুতিকবাতির মতো কল্পনা করতে বলতেন। তাঁর মতে, অনুপ্রেরণা 'উদ্দীপিত' হলে তাৎক্ষণিকভাবে সমস্ত বাতি জ্বলে উঠে আলোকিত হবে।

মিশার দৃঢ় ধারণা, 'অবশ্য আদেশের বলে অনুপ্রেরণা সম্ভব নয়, অনুপ্রেরণা বরং খেয়ালচালিত; তাই অভিনেতাকে শক্তিশালী কোনো পদ্ধতি নিয়ে শেষ চেষ্টার জন্য অনুক্ষণ তৈরি থাকতে হয়।' 

চেখভের বিবেচনায় বৈদ্যুতিকবাতিসমূহের' প্রত্যেকটিই প্রক্রিয়ার একটি প্রকরণ- যা কিনা প্রকৃত উন্নত অভিনয়ের উপকরণসমূহের একটি। যখন আমরা একটি কৌশলের প্রকরণ, যেমন 'আবহ' অনুশীলন করি, তখন আমরা এটা ফুটিয়ে তুলতে এমনই পারদর্শী হয়ে উঠি যে, 'আবহ-বাতি'-টি জ্বলে ওঠে। আমরা ইচ্ছামতো এটা জ্বালাতে শিখি। এরপর আমরা অন্যপ্রকরণ, যেমন 'বিকিরণকরণ' অনুশীলন করি যতক্ষণ না আমরা এমন উপায় দ্বারা ক্ষমতাশালী হই যাতে 'বিকিরণ-বাতি প্রজ্জ্বলিত হয়। এভাবে আমরা যখন বিভিন্ন কৌশলে দক্ষতা লাভ করতে থাকব, তখন দেখব আমাদের সচেতনভাবে মাত্র দু'টি কিংবা তিনটি বাতি প্রজ্জ্বলিত করতে হবে – এবং পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়ায় আরো অনেক বাতি আমাদের আর কোনো বিশেষ মনোযোগ ছাড়াই জ্বলতে শুরু করবে। যখন এ-রকম যথেষ্ট সংখ্যক বৈদ্যুতিকবাতি প্রখরভাবে জ্বলে, তখন আমরা দেখি যে, অনুপ্রাণনা আগের চেয়ে অধিকমাত্রায় উদ্দীপিত হয়।

মাইকেল চেখভের অনুপ্রাণিত অভিনয়ের ছক

চরিত্রায়ণ (কাল্পনিক শরীর ও কেন্দ্র) (Characterization [Imaginary Body and Center]):
অভিনেয় চরিত্রের জন্য অভিনেতাকে স্বীয় স্বভাব থেকে ভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য অর্জন | করতে হলে প্রথমেই 'কাল্পনিক শরীর' গড়ে নিতে হয়। এই কাল্পনিক শরীরটি চরিত্রেরই হবে, যার মধ্যে অভিনেতাকে নিয়ত বসবাস করতে হবে। ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে অভিনেতাকে নিজের শরীরের দৈর্ঘ্য ও আকার পরিবর্তন করে চরিত্রের মধ্যে শারীরিকভাবে রূপান্তর ঘটাতে হবে। প্রতিটি চরিত্রেরই একটি 'কেন্দ্র' থাকে যা শরীরের ভিতর বা বাইরে অবস্থিত হতে পারে; যেখান থেকে চরিত্রের মুভমেন্টের সমস্ত – স্পন্দনের উৎপত্তি হয়। এই কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন ঘাত-প্রতিঘাতই সকল দেহভঙ্গির জন্ম দেয় এবং শরীরকে সামনে বা পিছনে চালনা করে, এবং বসতে, হাঁটতে, দাঁড়াতে বাধ্য করে। কোনো অহংকারী চরিত্রের কেন্দ্র থাকতে পারে তার চোয়ালে বা কাঁধে, কৌতূহলী চরিত্রের বেলায় যেমন নাকের ডগায় হওয়া সম্ভব। এই কেন্দ্র যে-কোনো আকার বা আয়তন, রঙ বা সঙ্গতিপূর্ণ কিছু হতে পারে; একক চরিত্রের একাধিক কেন্দ্র থাকাও অসম্ভব নয়। কেন্দ্র খুঁজে পেলে চরিত্রটির ব্যক্তিত্ব ও শারীরিক গঠন উপলব্ধি করা সহজ হয়। (৪র্থ এবং ৬ষ্ঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

বিন্যাস (Composition) : 
প্রকৃতি এবং শিল্পে বিরাজ করছে সূত্রাবলী ও নীতিমালা, যা নির্মিতি ও সুষৌম্য দ্বারা গঠিত। এই বিন্যাসের বোধ উচ্চাবচতা, বর্ণালী ও আলোছায়ার (contours বা পরিণাহ ) বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে এবং ভাব, সংলাপ, মুভমেন্ট, রঙ, আকার এবং শব্দের প্রকাশকে নিছক বৈচিত্র্যহীন অভিব্যক্তি ও বিষয়পুঞ্জে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করে। বিন্যাসের বোধ অভিনেতা ও দর্শককে সৃষ্টিশীলতা ও উপলব্ধির স্তরে নিয়ে যায়। (৮ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

মনস্তাত্ত্বিক ভঙ্গি (Psychological Gesture) :
মনস্তাত্ত্বিক ভঙ্গিমার ফলে চরিত্রের মনস্তত্ত্ব ও লক্ষ্য মূর্ত হয়ে ওঠে। গোটা শরীর দিয়ে ও যথাসম্ভব তীক্ষ্ণতায় একে সম্পন্ন করার ফলে অভিনেতা চরিত্রের মূল কাঠামো লাভ করেন এবং একই সঙ্গে পাণ্ডুলিপির চাহিদা মতো বিভিন্ন ভাব পরিগ্রহ করতে সমর্থ হন। (৫ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

শৈলীবোধ (Feeling of Style) : 
মঞ্চে সবই কাল্পনিক। একজন অভিনেতা অভিনয়ে শৈলীবোধ প্রকাশের জন্য নিছক নগণ্য 'বাস্তবতা'-র জন্য প্রাণপণ চেষ্টা না করে বরং কোনো নাটক, চিত্রনাট্য বা দৃশ্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য অর্জনে সচেষ্ট হন। ট্র্যাজেডি, ড্রামা, মেলোড্রামা, প্রহসন, কমেডি এবং ভাঁড়ামো প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে শৈলীগত স্বাতন্ত্র্য বা ভাবগত ভিন্নতা রয়েছে; যা পৃথক ও সংহত অভিজ্ঞতা দাবী করে। (৭ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

4 Brothers (BEEF)

সত্যবোধ (Feeling For Truth) : 
এ হল নিজেকে 'উন্মোচন'-এর প্রশ্ন – অভিনয়ের সময় নিজের অনুভূতিশীলতাকে সত্য আচরণের পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। সত্যের রয়েছে কয়েকটি দিক – 
১) ব্যক্তিগত বা মনস্তাত্ত্বিক সত্য – যেমন, 'আমার চালচলন ও কথাবার্তা নিজের কাছে, নিজের মনস্তত্ত্বের কাছে সত্য। 
২) পাণ্ডুলিপিতে প্রদত্ত পরিস্থিতি অনুযায়ী সত্যাশ্রয়ী হওয়া। 
৩) ঐতিহাসিক সত্য, অর্থাৎ যখন ইতিহাসের কাহিনী নিয়ে নাটক হবে তখন সে-যুগের শৈলীকে উপেক্ষা করা যাবে না এবং যেখানে ক্রিয়া সংঘঠিত হবে সেখানকার জাতির শৈলী অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে অনুধাবন করা। ৪) শৈলীগত সত্য, নাটকের শৈলী যথা ট্র্যাজেডি, কমেডি, প্রহসন, ড্রামা প্রভৃতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন। এবং ব্রেখটীয়, শেক্সপিয়রীয় প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নাটকীয় গুণাবলীসহ শৈলীবোধের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্রকারভেদের অভিজ্ঞতা অর্জন। 
৫) চরিত্রের প্রতি সৎ হওয়া। প্রতি চরিত্রের ক্ষেত্রে এ বিষয় আলাদা হবে। চরিত্র এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়; অভিনেতা ক্রমে ক্রমে চরিত্র নিজের সম্পর্কে যা ও যতটুকু বলে সে নির্দেশ গ্রহণ করেন। 
৬) সম্পর্কের সততা, একটি চরিত্র থেকে অন্যান্য প্রতিটি চরিত্রের প্রতি প্রায়শ যে সূক্ষ্ম প্রভেদ এবং পরস্পরের প্রতি মনোভাব দেখা যায় ।

স্বস্তিবোধ (Feeling of Ease) : 
এ হল স্তানিস্লাভস্কির বিশ্রাম-কৌশলের একটি প্রকৃষ্ট বিকল্প, যা সাধারণ নিদের্শ হিসাবে অভিনেতার ভিতর তাৎক্ষণিক অনুভূতি এবং তীব্র আবেগপ্রবণ চিত্রকল্পরাজি সৃষ্টি করে এবং নির্দেশের বুদ্ধি-নির্ভর ও সচেতন ব্যাখ্যার প্রয়াস পরিহার করে। যেমন অভিনেতাকে 'আরামে বসতে' না বলে বরং 'স্বস্তিবোধের সঙ্গে বসতে' বলা যেতে পারে। অভিনেতা দ্রুত দ্বিতীয় নির্দেশটি পালন করতে পারেন। কিন্তু প্রথমটি সম্পর্কে অবশ্যই একটু থেমে চিন্তা করবেন। (৪র্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

আকৃতিবোধ (Feeling of Form) : 
অভিনেতাকে অবশ্যই নিজের শরীরের আকৃতি সম্পর্কে এবং মঞ্চে তার নিজের মুভমেন্টের ব্যাপারে অনুভূতিপ্রবণ হতে হবে। করিওগ্রাফার বা ভাস্করের মতো অভিনেতা তার শরীরকে বিভিন্ন গঠনে রূপায়িত করে প্রয়োজনীয় আকার দেবেন। অভিনেতা যখন তার শরীরের আকারে এ-রকম অনুভূতি এবং ভাস্বর্যমণ্ডিত মুভমেন্ট জাগিয়ে তুলবেন, তখন অত্যন্ত অভিব্যক্তিপূর্ণ উপায়ে তার শরীরকে প্রভাবিত করার সামর্থ্য বৃদ্ধি করে। এই বিশেষ সচেতনতাকে 'আকৃতিবোধ' বলে। (৪র্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। [আদি-অন্ত | শুরু এবং শেষ]

সৌন্দর্যবোধ (Feeling of Beauty) : 
প্রত্যেক শিল্পীর মধ্যে প্রায়শই জীবন্ত সৌন্দর্যের ফোয়ারা ও সৃজন-সঙ্গতি গভীরভাবে লুকিয়ে থাকে। সত্তার এই আন্তর সৌন্দর্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া অভিনেতার প্রথম ধাপ, এই সৌন্দর্যকে পরে তিনি তার সমস্ত অভিব্যক্তি, মুভমেন্ট এবং চরিত্রায়ণ – এমনকি 'কুৎসিৎ' কিছুতে প্রবিষ্ট করাতে পারবেন। সৌন্দর্য হল এমন অসাধারণ গুণ যা সকল বিখ্যাত শিল্পের বৈশিষ্ট্য। (৪র্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

সমগ্রতাবোধ (The Feeling of Entirety for the Whole]) : 
কোনো শিল্পসৃষ্টির সম্পূর্ণ আকার অর্থাৎ আদি, মধ্য ও শেষ থাকে। তেমনি মঞ্চ বা পর্দার যা কিছু তাতে এই নান্দনিক সম্পূর্ণতা যুক্ত হবে। দর্শককূল এই সম্পূর্ণতাবোধ তীব্রভাবে উপলব্ধি করেন এবং যা অবশ্যই অভিনেতার দ্বিতীয় স্বভাব হওয়া উচিত। এই বোধ গোটা প্রযোজনা, একটা দৃশ্য অথবা একটা সংলাপের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত পারে। (৪ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

গুণাবলী (Qualities [Sensation and Feelings]) : 
অনুভূতি আদেশের বশবর্তী নয়, তা কেবল সাদরে তুষ্ট করা যায়। অনুভূতিকে তুষ্ট করার উপায় হল গুণাবলী এবং সংবেদন। গুণাবলী তাৎক্ষণিকভাবে আয়ত্ত করা যায় – বিশেষ করে মুভমেন্টের মাধ্যমে। স্নেহ, আনন্দ বা ক্রোধের অভিজ্ঞতা লাভ না-করেও স্নেহ, আনন্দ, ক্রোধ, সন্দেহ, দুঃখ, অধৈর্য ইত্যাদি গুণাবলী প্রকাশের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে বাহু ও হাত নাড়িয়ে বিভিন্ন ভঙ্গি করা যায়। এর যে-কোনো একটি গুণের মুভমেন্ট সম্পন্ন করার পর অচিরেই 'স্নেহানুভূতি'-র অভিজ্ঞতা লাভ শুরু হয়, এবং খুব তাড়াতাড়ি এই অনুভূতি অভিনেতার অন্তরে সত্যিকার ‘স্নেহানুভূতি' সৃষ্টি করবে। (৩র্থ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

শরীর (মনো-দৈহিক অনুশীলন) (Body (Psycho-Physical Exercises]) : 
মানবশরীর ও মন অবিভাজ্য। অভিনেতার কোনো কাজই পুরোপুরি মানসিক বা একচেটিয়া দৈহিক নয়। তার শরীর (এবং চরিত্র) অবশ্যই সবসময় মনস্তত্ত্বকে প্রভাবিত করে এবং এর বিপরীতটিও ঘটে। তাই এ-সকল অনুশীলনী অবশ্যই মনো-দৈহিকতায় সম্পন্ন হবে এবং যান্ত্রিকভাবে সম্পাদিত হবে না। (৬ষ্ঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

কল্পনা (Imagination) : 
প্রায় সকল অভিনয়ই অভিনেতার কল্পনা-ক্ষমতা ও নাটকের কাহিনীর বাস্তবতাকে মঞ্চে বা পর্দায় পুনঃসৃষ্টির ফসল। অভিনেতা যতই নিজের কল্পনাকে ও উৎকাল্পনিক জীবনকে উদ্দীপিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন ততই তিনি চরিত্রের গভীরে যোগাযোগের ও তাৎপর্য উপলব্ধির ক্ষমতা অর্জন করবেন। (১ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

বিকিরণ / গ্রহণ (Radiating / Receiving) : 
অভিনেতার গুণাবলী, আবেগ বা চিন্তা যা-কিছু অদৃশ্য উপাদান সবই প্রেরণের সামর্থ্য হচ্ছে বিকিরণ। অধিকতর শক্তিসহ তা প্রেরণ করা উচিত, কারণ বিকিরণ হচ্ছে অভিনেতার 'ইচ্ছা'-র ক্রিয়া। তিনি চাইলে নিজের চরিত্রের উপস্থিতি মঞ্চে প্রবেশের আগেই সচেতনভাবে 'বিকীর্ণ করতে পারেন। মঞ্চে বা পর্দায় অভিনেতা বা অভিনেত্রীর প্রভাব ফেলার 'ক্ষমতা' – তিনি কতটা অদৃশ্য উপাদান বিকিরণের ক্ষমতা অর্জন করেছেন, তার উপর নির্ভর করে। কিছু মানুষের জন্মসূত্রেই এ ক্ষমতা থাকে; অন্যদের এই ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়।

'গ্রহণ'-এরও বিকিরণের ন্যায় তীব্র প্রভাব রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গুণাগুণ, চিন্তা, অনুভূতি প্রেরণের পরিবর্তে অভিনেতা অন্যান্য চরিত্র, আবহ, দর্শক – সবখান থেকে তা ‘টেনে গ্রহণ করেন'। এই ক্ষমতাও অভিনেতাকে প্রচণ্ড শক্তির সঙ্গে অর্জন করতে হয়। অভিনেতার নিজেকে প্রশ্ন করা জরুরি – তিনি যে চরিত্র করছেন, যে ধরনের চরিত্র পেয়েছেন তা বিকিরণকর' না 'গ্রহণকারী' চরিত্র। খেয়াল রাখতে হবে ‘বিকিরণকর চরিত্ররা' কোনো কোনো দৃশ্যে শক্তিশালী 'গ্রহণকারী' রূপে জ্বলে ওঠে, এবং এর বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে।

ইম্প্রুভাইজেশন ও অলঙ্কার (Improvisation and Jewelry')
ইম্প্ৰভাইজেশনকে চেখভ প্রস্তুতিমূলক প্রশিক্ষণের সময় যেমন, তেমনি কোনো ভূমিকায় মঞ্চে চূড়ান্ত অভিনয়ের জন্যও মূল্যবান মনে করেন। যখন আপনার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত- চরিত্রায়ণ স্থির হয়ে গেছে, তার সংলাপ, অভিনয়ধারা ও আবেগগত অংশ সুদৃঢ়ভাবে আত্মস্থ তখন পুনরায় ইম্প্রুভাইজেশন করুন। সংলাপসমূহ বলতে চেষ্টা করুন অথবা পুরোপুরি উপেক্ষা করুন, যাতে আপনার চরিত্রটি 'উপপাঠ" (চরিত্রটি প্রকৃতই যা ভাবছে) অনুসারে কথা বলতে পারে। উন্নত অথবা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে অভিনয় করুন এবং আলাদা করে মনোযোগ দিয়ে দেখুন চরিত্রটি 'কীভাবে' অভিনয়াংশকে পূর্ণতা দিচ্ছে। যখন দৃশ্যটি এগোতে থাকে লক্ষ করুন চরিত্রটি কী কী দেখছে, শুনছে বা মনোযোগ দিচ্ছে। এই আবিষ্কৃত কর্মকাণ্ডের মহড়া দিলে আপনার অভিনয়কে 'অলঙ্কার'-মণ্ডিত করা সহজতর হবে। আর এ সব অনন্যসাধারণ খুঁটিনাটি ও ক্ষুদ্র উজ্জ্বল মুহূর্তই দীর্ঘকাল স্মরণ থাকে এবং তা অভিনেতা ও দর্শক উভয়কেই আনন্দ দেয়।

সম্মিলন ( Ensemble) :
থিয়েটার হল যৌথশিল্প। মহড়াতে কেউ যেভাবে নিজের অভিনয় গড়ে তোলেন প্রায় সব সময়ই প্রযোজনায় তার প্রকাশ ঘটে। অভিনেতারা যখন শিল্পগতভাবে অবারিত ও একে অন্যের সঙ্গে একই সুরে বাঁধা তখন দর্শক ও শিল্পীর জন্য গোটা থিয়েটারী অভিজ্ঞতা উঁচুস্তরে উন্নীত হয়, অধিকতর শক্তিশালী আবহ জন্ম নেয়, চরিত্রের মধ্যেকার সম্পর্ক দৃঢ় ও স্বচ্ছভাবে সংজ্ঞায়িত হয়, এমনকি অভিনেতার 'সময়-নির্ধারণ' (সংলাপ ইত্যাদির গতি) এবং দৃশ্যের ছন্দ অধিকতর প্রবহমান ও প্রাণবন্ত হয়। 'সম্মিলনে'-এর বোধ অভিনেতাকে শৈল্পিক নিয়ন্ত্রণের অনুভূতি বিকিরণে সমর্থ করে ও মানবাত্মার শক্তি সঞ্চালনে সমর্থ করে। (৭ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

দৃশ্যবিন্দু (Focal Point) : 
একটি দৃশ্যের সবকিছু সমান গুরুত্ববহ নয়। নির্দেশকের উপরই সাধারণত 'দৃশ্যবিন্দু'-র দায়িত্ব বর্তায় (বিশেষ সময়ে যেখানে দর্শকের মনোযোগ বা দৃষ্টি নিবন্ধ হবে বলে তিনি আশা করেন)। তবুও অভিনেতাকে পাণ্ডুলিপির গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। তিনি জানবেন কোন ক্ষণটি তার চরিত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অভিনেতা কীকরে ঐ মুহূর্তগুলোতে দর্শকের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করবেন তা তাঁর যথার্থ সৃজনশীল কাজ। তিনি হয়তো কোনো ভঙ্গিতে হালকা চাপ (বা বিকিরণ) দিয়ে বা একটা ভ্রু তুলে কোনো সংলাপে গুরুত্ব বা নির্ভর না করে দর্শকের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন। একটা যতি বা আকস্মিক কাঁধ-ঝাঁকানোও 'দৃশ্যবিন্দু' সৃষ্টি করতে পারে এবং দর্শকের সাথে কাঙ্ক্ষিত যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতে পারে । (৭ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

লক্ষ্যবস্তু (Objective) : 
এ হল যে উদ্দেশ্যে বা লক্ষ্যে অভিনেতার চরিত্র প্রাণপণ চেষ্টা করে। প্রত্যেক চরিত্রের একটি 'লক্ষ্যবস্তু' ও অতি-লক্ষ্য উভয়ই থাকে। অতি লক্ষ্যের উদাহরণ যদি হতে পারে 'আমি মানবতার সেবা করতে চাই। লক্ষ্যবস্তুর উদাহরণ হতে পারে 'আমি এই বিশেষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি রক্ষা করতে চাই'। আদর্শানুসারে সমস্ত লক্ষ্যবস্তু শুরু হওয়া উচিত এভাবে 'আমি করতে চাই...' কোনো 'সম্পাদনযোগ্য' ক্রিয়া যার অনুবর্তী হবে। (৭ম অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।

আবহ (Atmosphere) : 
আবহ হল সংবেদনযোগ্য মাধ্যম, যেমন – কুয়াশা, জল, অন্ধকার, বা বিভ্রান্তি যা পরিবেশে বিসৃষ্ট হয় এবং মানুষের মধ্য থেকে বিকিরণ হয়। মঞ্চে উত্তুঙ্গ আবহ থিয়েটারকে পূর্ণ করে রাখে। দর্শক ও অভিনেতা উভয়ই অজ্ঞাতে আবহ দ্বারা প্রভাবিত হন, কারণ অভিনেতা আবহের অদৃশ্য তরঙ্গকে শুষে নেন এবং দর্শকের মধ্যে বিকীর্ণ করেন। যদিও তা দেখা যায় না, আবহ তীব্রভাবে অনুভব করা যায় এবং তা থিয়েটারী যোগাযোগের প্রাথমিক উপায়। কোনো গথিক স্থাপত্যের গির্জা, হাসপাতাল, সমাধিক্ষেত্র – এ-সব স্থানে যে-ই প্রবেশ করুক তাকে সেখানকার আবহ প্রভাবিত করবে। তারা আবহ দ্বারা আবৃত হবে। মানুষও উদ্বেগ, ঘৃণা, প্রেম, ভীতি, বোকামীর আবহে তাড়িত হয়ে থাকে। নাটকের পাণ্ডুলিপি এবং নিদের্শকই প্রতি দৃশ্যের আবহ নির্ধারণ করে দেয় এবং অভিনেতারা সমবেতভাবে ঐ আবহ সৃষ্টি ও রক্ষা করে চলেন; এবং অন্য দিকে তারা নিজেরাও সে আবহের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারেন। (৩য় অধ্যায় দ্রষ্টব্য)।


তথ্যসূত্র: 
মাইকেল চেখভের অভিনয় পদ্ধতি, অনুবাদ: শামসুদ্দিন চৌধুরী, পড়ুয়া প্রকাশনী, ঢাকা- বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা: ৩৫-৪১

1 comment:

  1. Be certain to read our website for the most recent updates on security protocols. As gamers 솔카지노 of this classic game would count on, the game’s standard table view provides the entire conventional inside and out of doors bets. Players can place a full range of special bets, properly as|in addition to} statisticsbased bets similar to hot and cold numbers. They can swap to the racetrack view to put considered one of a sequence of classic call bets and save as much as} ten favourite bets for reusing. While betting on one number may earn you big cash}, it’s also very risky.

    ReplyDelete

Powered by Blogger.